×

জাতীয়

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) -২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব
টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব
টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) -২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও বিনির্মাণে বাংলাদেশ সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) -২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিষয়টি অবহিত করেন তিনি। এছাড়া, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আইওসি সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তোলা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারসহ মোট ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে’ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ছয়টি বিষয় হলো:
  • ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমুদ্র কূটনীতি’ জোরালো করতে হবে।
  • এই অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তৎসংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
  • একটি স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে।
  • ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে।
  • ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চর্চা ও জনবান্ধব উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক- নারী সম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
  • উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এ অঞ্চলটি নানাবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও আফ্রিকার অঞ্চলসমূহে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ।

ভারত মহাসাগরকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ তৈরির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

সমুদ্রপথের বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে, সাগর-মহাসাগরসমূহের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য বিগত ১৫ বছরে তিনগুণ বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী দেশসমূহের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা এখনো অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সার সংকটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারত্ব ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, শান্তির বার্তাকে সর্বাত্মকভাবে সুসংহত করতে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে বাংলাদেশ মনে করে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ।

বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের চরম দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে ও আমাদের মাথাপিছু আয় গত এক দশকে তিনগুণ বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলার হয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মানদণ্ড পূরণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি যেখানে শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সহায়ক হবে। গত বছর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন করেছি। সম্প্রতি আমরা রাজধানীতে প্রথম মেট্রো রেল উদ্বোধন করেছি। আমরা চট্টগ্রামে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ শিগগিরই শেষ করব। নদীর তলদেশ দিয়ে এ ধরনের স্থাপনা, দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই হবে সর্বপ্রথম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বপ্ন হলো ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ নির্মাণ করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য কৌশল হিসেবে আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করছি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মরিশাসের রাষ্ট্রপতি পৃথ্বীরাজ সিং রূপুণ, মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি ফয়সাল নাসিম, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রাম মাধব প্রমুখ।

এবারের ইন্ডিয়ান ওশান সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারত্ব ও সমৃদ্ধি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App