×

সারাদেশ

বাউফলে ‘মোকা’ ঝুঁকিতে চরাঞ্চলের ৩০ হাজার বাসিন্দা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ০৬:২৪ পিএম

সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল ও সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বাউফল উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী আগামী ১৪ কিংবা ১৫ মে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। এমন পূর্বাভাসে বাউফল উপজেলার ১৮টি চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ওই চরগুলোতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রায় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বাসিন্দারা। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে নদী বেষ্টিত ওই সব চরাঞ্চলে প্রাণহানিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল।

উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। ছোট-বড় মিলিয়ে ১১টি চর নিয়ে গঠিত হয়েছে ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চর ব্যারেট এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু সেখানকার মানুষের জন্য ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র।

এছাড়া, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর রায় সাহেব, চর উত্তর মিয়াজান, চর কিসমত, চর নিমদী, উত্তর দিয়ারা কচুয়া, চর ওয়াডেল এলাকায়ও নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেন ওখানকার মানুষ।

চর ব্যারেটের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চর ব্যারেটে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। চরের চার পাশে নদী থাকায় দুর্যোগের সময় আমরা দুরের কোনো আশ্রয় কেন্দ্রও যেতে পারি না। ট্রলারের ব্যবস্থা থাকলে ঘরবাড়ি, গরু মহিষ রেখে কেউ দুরের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না।

চন্দ্রদ্বীপের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নাগর আলী হাওলাদার বলেন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার চর ব্যারেটও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ অতি গুরুত্বপূর্ণ।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চন্দ্রদ্বীপ ইউপির টিম লিডার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চন্দ্রদ্বীপে আশ্রয় কেন্দ্র সংকট রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বসে প্রায়ই ঘটে প্রাণহানীর ঘটনা। তারপরো রেড ক্রেসিন্টে সোসাইটির কর্মীরা মানুষের সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাছ জানান, চন্দ্রদ্বীপে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। সাইক্লোন শেল্টার আছে মাত্র পাঁচটি। ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি এলাকায় নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক বার লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

এদিকে, উপজেলা ধুলিয়া ইউনিয়নের নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন এলাকা চর বাসুদেবপাশা। বাসুদেবপাশায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ বসবাস করেন। এখানেও নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেকে ঘর বাড়ি ফেলে রেখে ধুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন। তবে অনেকে ঘর বাড়ি গরু মহিষের মায়ায় ঝুঁকি নিয়ে ওই চরেই অবস্থান করেন। ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির জানান, ধুলিয়ার চর বাসুদেব পাশায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ওখানে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই ট্রলারে করে বাসুদেব পাশার লোকজনকে ধুলিয়ার আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে আসি।

ঘূর্ণিঝড়ে আরেক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে উপজেলার চর ফেডারেশন। এই চরটি কালাইয়া ইউনিয়নের অংশ। এখানে অর্ধশত মানুষ বসবাস করেন। এখানেও নেই কোন আশ্রয়কেন্দ্র। ২০০৭ সালের সিডরের তান্ডবে এই চরে ৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। তারপর থেকে অনেকেই চর ফেডারেশন ত্যাগ করেছেন। এখনো কয়েকটি পরিবার সেখানে বসবাস করছেন। এছাড়াও তেঁতুলিয়া নদী তীরবর্তী কালাইয়া ইউনিয়নের, চর কালাইয়া, বগী, শৌলা, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী, ধানদী, তাঁতেরকাঠি, তালতলী, কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা, বাজেমহল, চর মমিনপুর, ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া ও ধুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারাও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম। মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও বিপাকে পড়ে গবাদী পশু।

উল্লেখ্য, সিডরসহ বিগত ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার চর ফেডারেশনে ৪৫জন, চন্দ্রদ্বীপে সাতজন, কেশবপুর, কালিশুরী ও কনকদিয়ায় পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ফসল। বিশেষ করে বোরো ধানসহ রবিশস্য। এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন থেকেই নদী ভাঙন থেকে রক্ষা ও জলোচ্ছ্বস ঠেকাতে বেড়িবাঁধের দাবি করে আসছেন।

কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহমেদ মনির মোল্লা জানান, আসন্ন ‘মোকা’ মোকাবেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা কমিটিকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চর ফেডারেশনে বসবাসরতদের ট্রলারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল আমিন বলেন, এরই মধ্যেই ‘মোকা’ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেডিকেল টিমও ঠিক করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দূর্য়োগ মোকাবেলায় জান-মালের নিরাপত্তার জন্য ১৫৭টি সাইক্লোন শেল্টার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন জনপদ চন্দ্রদ্বীপে তুলনামূলক কম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। ওখানে বেশ কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App