×

অর্থনীতি

সিগারেটের মূল্যে কারসাজি, বছরে ৫৬৬০ কোটি টাকা ক্ষতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম

সিগারেটের মূল্যে কারসাজি, বছরে ৫৬৬০ কোটি টাকা ক্ষতি

প্রতীকী ছবি

সিগারেটের প্যাকেট মূল্য থেকে বিক্রয় মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকার প্রতিবছর ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া, সিগারেটের ভোক্তাদেরও নির্ধারিত মূল্যের অধিক অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘রাজস্ব আয় সিগারেটের ঘোষিত মূল্য ও বাজার মূল্যের পার্থক্যের প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্র পরিসরে পরিচালিত বাজার গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সভায় জানানো হয়, বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী চারটি স্তরের সিগারেট বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিটির জন্য একটি ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা আছে। ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি শলাকা বা প্রতি প্যাকেট সিগারেট যত দামে বিক্রি হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও সিগারেট কোম্পানিগুলো ঘোষিত মূল্যের ওপরই সরকারকে কর পরিশোধ করছে। ফলে সিগারেট সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও সরকার এই বাড়তি ব্যয়ের ওপর কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।

উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)- এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এসএম জুলফিকার আলী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)- এর গবেষণা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, একাত্তর টিভির চিফ বিজনেস রিপোর্টার সুশান্ত কে সিনহা। বাজার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের লিড ইকোনোমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা।

উন্মুক্ত আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ, ঢাকা আহসানিয়া মিশন ও ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করে। এছাড়া সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

রবার্ট শুভ্র গুদা বলেন, সিগারেটের প্যাকেটে উল্লেখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। এতে সরকার প্রায় ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা মূলত ঢাকা শহর, রাজশাহী শহর এবং সিরাজগঞ্জের পৌরসভা এলাকার সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি।

তিনি আরো বলেন, নিম্নস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ২০ শলাকার প্যাকেট নির্ধারিত মূল্যের থেকে গড়ে প্রায় ১১ টাকা, মধ্যম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা এবং উচ্চ স্তরের সিগারেট প্যাকেটের ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে ১০ টাকা বেশি দাম নেওয়া হয়ে থাকে। তবে, নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে বিক্রিত মূল্যের সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে। যেখানে প্যাকেট প্রতি বিক্রিত মূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ২৪ টাকা বেশি। দামের এমন পার্থক্যের কারণে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম উন্নয়ন সমন্বয় ও অন্যান্য তামাকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তামাক পণ্যে করারোপের পাশাপাশি এই পণ্যে ভোগ কমাতে উৎপাদন এবং বিপণনের পর্যায়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নস্তরের সিগারেটের বিক্রয়মূল্য বাড়লে নিম্নআয়ের মানুষের ব্যয়ের ওপর চাপ পড়বে ও তামাকপণ্যের ভোগ কমবে।

সুশান্ত সিনহা বলেন, সব প্রস্তাবনাই যেন আইনকে আরো শক্তিশালী করে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ন্যুনতম খুচরা মূল্যের থেকে বাড়তি টাকায় বিক্রি করলে তার ওপর অবশ্যই ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে কর আইনকে শক্তিশালী করতে হবে।

এসএম জুলফিকার আলী বলেন, এটি একটি সম্মিলিত যুদ্ধ, তাই করের মতো একটি মাত্র ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে তামাকজাতীয় পণ্যের বিক্রয় বা সেবন বন্ধ যাবে না। সিগারেট বা যেকোনো তামাকজাত পণ্য, নেশাজাতীয় দ্রব্য যার প্রাইস ইলাস্টিসিটি কম, যে কারণে এটির দাম বাড়াতে হলে অনেক বেশি বাড়াতে হবে।

এ সময় তামাকজাতীয় পণ্যের দাম যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ালে সেটি স্বল্পমেয়াদে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে খুব একটি প্রভাব বিস্তার করবে না বলেও জানান তিনি।

এসব তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি নিম্ন ও ক্ষুদ্র পরিসরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে কর নীতির জন্য কিছু বিষয়ে সুপারিশ পেশ করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত খুচরা মূল্য চলমান বাজার মূল্য থেকে বেশি নির্ধারণ করা, মধ্যমস্তরের সিগারেটে ভিন্ন ভিন্ন দামের ব্র্যান্ডগুলো একই মূল্যে নিয়ে আসা ও সিগারেটের ক্ষেত্রে চার স্তরের পরিবর্তে দুই স্তরের কর কাঠামো করা। এর ফলে জনগণকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারেরও তামাক পণ্য থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App