×

জাতীয়

বিদেশে যাওয়ার কথা জানতে পেরেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ০৩:০৭ পিএম

বিদেশে যাওয়ার কথা জানতে পেরেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক
বিদেশে যাওয়ার কথা জানতে পেরেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক
বিদেশে যাওয়ার কথা জানতে পেরেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক

ছবি: ভোরের কাগজ

করোনাকালীনন প্রকোপের সময়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ তার পরিবারকে আরবি পড়া শেখাতেন মো. সাইদুল ইসলাম। এ সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে তার। এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রি বা কোন আইনি পর্যায়ে না গিয়ে মৌখিকভাবে শিক্ষার্থী ও আরবি শিক্ষক বিয়েও করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে আরবি শিক্ষক বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তবে শিক্ষার্থীর পরিবার বিষয়টি না মেনে নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। বিষয়টি জানার পরই গৃহশিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এক পর্যায় শিক্ষার্থীকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন শিক্ষার্থীকে উপর্যুপুরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে মারা যায় সে।

বহুল আলোচিত গাজীপুরের সালনায় গৃহশিক্ষক কর্তৃক নৃশংসভাবে কুপিয়ে কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা ও তার মা এবং ২ বোনকে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনায় প্রধান ও একমাত্র আসামি মো. সাইদুল ইসলামকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গত ৮ মে রাতে গাজীপুরের সালনা এলাকায় গৃহশিক্ষক কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও নিহতের মা ও ২ বোনকে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। এ ঘটনায় পরেরদিন ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। গৃহশিক্ষককে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (১০মে) রাতে আমাদের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে মামলার প্রধান ও একমাত্র আসামি মো. সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানায়, গত ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে ভিকটিমের বাবা গ্রেপ্তারকৃতকে নিয়োগ করে। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগীদের বাসায় যাওয়া-আসা করতো। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ৫-৬ মাস আরবি শিখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে শিক্ষক সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত সাইদুল বিবাহের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার গ্রেপ্তারকৃতের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুল এর সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবর মাসে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃত সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্যক্ত করা হতে বিরত থাকে। কিন্তু গত ২ মাস যাবৎ ভিকটিমের কলেজে ও বাসার বাহিরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্যক্ত করতে থাকে এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি আরো জানায়, ভিকটিমকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গত ৭ মে বিকালে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পর দিন সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে তার রুমে ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে ও পায়ে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌঁড়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ছুরি দিয়ে তাদেরকেও এলোপাতাড়িভাবে কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন ও তার মা ও ছোট ২ বোনের অবস্থা আশংকাজনক হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে তাদের শারিরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে তাদেরকে উত্তরার একটি হাপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, ভিকটিমের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, সে ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকুরি করতো। এছাড়াও ভিকটিম উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল এবং ভিসাসহ আনুসাঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিল।

গ্রেপ্তারকৃত সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ করে। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করত এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াত। সে ২ মাস আগে দুটি চাকুরীই ছেড়ে দেয়। ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য সে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময়ে গত রাতে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App