×

মুক্তচিন্তা

তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১২:৪৪ এএম

তীব্র তাপদাহের ফলে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝে আজ মানুষের অত্যাচারে প্রকৃতি দারুণভাবে রুদ্ররূপ ধারণ করেছে! অবাধে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, বন ধ্বংস আর পাহাড় কাটার ফলেই প্রকৃতি ক্ষেপে উঠেছে ব্যাপকভাবে! প্রকৃতির এই রুদ্র আচরণ থেকে আমাদের পরিত্রাণের জন্য ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা অতীব জরুরি। তাহলেই হয়তো প্রকৃতি পাবে আপন পরিবেশ। তাপদাহ কমে আসবে ভূমণ্ডল থেকে। খাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র তৈরি, গৃহনির্মাণ, ওষুধ, সৌন্দর্যায়ন প্রকৃতির জন্য আমরা গাছ লাগাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গাছ থেকে নির্গত অক্সিজেন আমরা বেঁচে থাকার জন্য গ্রহণ করি। আমরা জানি কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্ততপক্ষে ২৫ শতাংশ ভূমিতে বনজঙ্গল থাকা দরকার। সেই তুলনায় বাংলাদেশে গাছ নিধন ও নির্বচারে বন ধ্বংসের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি নেই। গত বছরে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এই তথ্য মানতে নারাজ। মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশের মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর লেশমাত্রও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। সত্যি যদি এমনটাই হতো তাহলে আজকে বাংলাদেশের পরিবেশ এতটা ঘোলাটে কিংবা তাপদাহ পরিলক্ষিত হতো না। আর এ জন্য আমাদের গাছ অবাধে কর্তন ও নির্বচারে বন ধ্বংসকেই দায়ী করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির লীলাভূমি টিলা ও পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে এক শ্রেণির অসাধু ভূমিখোর। কিছুদিন ধরে দেশে তীব্র তাপদাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু দিন পর পর সামান্য বৃষ্টি হলেও তা যৎসামান্য। যেটাতে গরমের তীব্রতা কমে না বরং আরো বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে আরো অসহনীয়। তাপদাহের এ তীব্রতার কারণে দিনকে দিন সারা বিশ্বের তাপমাত্রা আরো বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। ৫৮ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এ বছর। তাপমাত্রা এ বৃদ্ধির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো জনবহুল শহরগুলোতে এর মাত্রা আরো বেশি। আর এর প্রতিক্রিয়া বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে। তীব্র এ গরমের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কর্মজীবী মানুষও। শিশুরা পড়েছে গরম থেকে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের কবলে। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে তাকালেই তা বোঝা যায়। এছাড়া বেড়েছে নানা সব জটিল রোগ। পরিবেশের ধ্বংসের ও অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছে, অধিক হারে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প কারখানা স্থাপন, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন, পাহাড় কাটা, ইটভাটাগুলোতে অবাধে বনের গাছ কেটে পোড়ানো হচ্ছে। এর কারণে একাধারে যেমন বায়ু ও পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে তেমনি বনের গাছ কেটে বন ও জীববৈচিত্র্যকেও ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়া বিষাক্ত গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ, ক্লোরো ফ্লোরো গ্যাস নিঃসরণ, অধিক হারে গাছ কর্তন, নির্বিচারে বন নিধনসহ পরিবেশের রক্ষাকবচ বিভিন্ন উপাদান যেমন নির্বিচারে বিভিন্ন পশু-পাখিকে হত্যা করা। আর এসব রক্ষায় যদি এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে আমাদের এ পৃথিবীতে বসবাস করা খুবই মুশকিল হয়ে পড়বে। বৃক্ষরাজি শব্দদূষণ ও পরিবেশদূষণ রোধ করে। এক হেক্টর পরিমাণ মাঝারি বন ১০ ডেসিবল শব্দ হ্রাস করতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ও বিভিন্ন উন্নয়নকাজে বনের জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত বর্তমানে বনভূমি রক্ষা করার পাশাপাশি বনের বাইরে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের ভাসাম্য ফিরিয়ে আনা। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অতি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণের ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে বরফ গলতে শুরু করেছে। এছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্র বেশি হওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ধীরে ধীরে ওপরে উঠে আসার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরো একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গাছ পৃথিবীর এ ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেন নিঃসরণ করবে। যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি কিছুটা ধীরগতি হয় এবং বরফ গলা কমে আসবে। তাই এখন অতীব জরুরি আমাদের এই অক্সিজেন ফ্যাক্টরিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদেরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে পৃথিবীটাকে একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আমাদের গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। বন উজাড়ের দরুন নানা জাতের গাছগাছালি, নানা জাতের প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। তাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছ নিধন বন্ধ করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কঠোর আইন প্রণয়ন ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অক্সিজেন ফ্যাক্টরি গাছ লাগাতে জনগণকে দারুণভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাতে সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলেই হয়তো পরিবেশ রক্ষা পাবে আমাদের এই ধ্বংসলীলা থেকে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ষা পাব আমরা মানব জাতি, পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন প্রাণিকুল। কমে আসবে পৃথিবী থেকে তীব্র এ তাপদাহ। বাড়বে অক্সিজেন। আলকামা সিকদার : সাংবাদিক ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App