×

সম্পাদকীয়

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১২:৪৪ এএম

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এবার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোকা। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকলেও মোকা মোকাবিলায় তেমন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। ক্রমেই ঘূর্ণিঝড় রূপে আবির্ভূত হয়ে শক্তি বাড়িয়ে ভয়ংকর রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে মোকার। ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন- নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাণ্ডব চালাবে ‘মোকা’। আগামী রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকালের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা ধরে মোকার তাণ্ডবরূপ দেখা যেতে পারে। এতে জলোচ্ছ¡াসসহ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আজ পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি প্রাথমিকভাবে ১১ মে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এরপর ধীরে ধীরে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১২ মে উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড় রবিবার সকাল ৬টার পর থেকে সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘণ্টায় ১৮০-২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৭-১০ ফুট এবং খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৫-৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ভয়ংকর এই ঘূর্ণিঝড়ের পদধ্বনি পাওয়া গেলেও উপদ্রুত অঞ্চলে কীভাবে ‘মোকা’ তাণ্ডব মোকাবিলা করা হবে তার গাইডলাইন তৈরি হয়নি। এখনই উপকূলে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি। উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। উপকূলীয় জেলাগুলোয় সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া জরুরি। এটা ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত দশ বছরে দেশে বেশ ক’টি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব তাতে সন্দেহ নেই। যত দ্রুত সম্ভব উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের ঘূর্ণিঝড় মোকার ছোবল থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App