×

মুক্তচিন্তা

তাপদাহে কৃষিতে শঙ্কা ও করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ১২:৩৬ এএম

৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ধানের জন্য অসহনীয়। দেশে চলছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা! যা সার্বিক ধান উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় অন্তরায়। এই অতি তাপদাহে ধান ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু ও তুলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদনেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং গত ৫৮ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা সার্বিক কৃষির জন্যই অসহনীয়। এ বছর অস্বাভাবিক গরম পড়ছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ খুবই কম। অতি খরা, অতি উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ফসলের উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈরী আবহাওয়ায় কীভাবে ভালো ফসল উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। অন্যদিকে গাছপালা উজাড় করে সবুজ আচ্ছাদন হারিয়ে নগরায়ণ ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। এই তাপদাহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও দায়ী বলে মনে করেন গবেষকরা। এছাড়া সারাদেশের পুকুর, খাল-বিল, জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে ভরাট এবং দখলের মহোৎসব চলছে, যার বৈরিতা তাপদাহের সঙ্গে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আগামী ১০-১৮ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফসলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে : তীব্র তাপদাহে ধান ফসলের ব্যবস্থাপনা বোরো ধানে হিটশক (তাপজনিত ক্ষতি) বা গরম বাতাস (৩৫ ডিগ্রির বেশি) প্রবাহ হলে ধান চিটা হতে পারে। তাই জমিতে ২-৩ ইঞ্চি পানি কাইচ থোর হতে ফুল ফোটা পর্যায় পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। ধান গাছের ফুল অবস্থায় ৭-১১টা পোড়াগায়নের সময়, এই সময় কোনো প্রকার বালাইনাশক স্প্রে করা যাবে না। ধান যাতে চিটা না হয় সে জন্য এমওপি সার ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম মিশিয়ে ৫ শতাংশ হিসেবে স্প্রে করা যেতে পারে। তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য জলবায়ু সহনশীল তাপ প্রতিরোধী নতুন ধানের জাত ব্রি৮৯ এবং ব্রি৯২ জাতের ধান চাষ করা যেতে পারে। তীব্র তাপদাহে ফল-ফসলের ব্যবস্থাপনা আম, কাঁঠাল এবং লিচু গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত (৭-১০ দিন অন্তর) সেচ প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখা-প্রশাখায় পানি স্প্রে করে দিতে হবে। প্রয়োজনে প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া যেতে পারে। এতে ফল ঝরে পড়া কমবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মাটিতে রস ধরে রাখার জন্য সেচের পর গাছের গোড়ায় মালচিং দেয়া যেতে পারে। তীব্র তাপদাহে সবজি ফসলের ব্যবস্থাপনা ফল এবং পাতা জাতীয় সবজির জমিতে আগামী এক সপ্তাহে মাটির ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় ২-৩টি সেচ ব্যবস্থা করতে হবে। জৈব সারের পানি ধারণক্ষমতা বেশি, সেজন্য জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। ফল এবং সবজির চারাকে তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মালচিং ও সেচ নিশ্চিত করতে হবে। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে। তীব্র তাপদাহে প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রাণিসম্পদের তাপপ্রবাহজনিত পীড়ন (স্ট্রেস) সহনশীল করতে, গবাদি প্রাণী পোল্ট্রির ঘর শীতল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। গবাদি প্রাণীকে দিনে একাধিকবার গোসল করিয়ে দিতে হবে অথবা পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। গবাদি পশুকে পানির সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ ভিটামিন সি এবং গøুকোজ ইত্যাদি মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। তাপদাহের এই সময় গবাদি পশুকে ঘরে আবদ্ধ না রেখে গাছের বা প্রাকৃতিক ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। গবাদি পশুকে এই সময় শুকনো খড় না দিয়ে কচি সবুজ ঘাস খেতে দিতে হবে। অতি তাপদাহে খাবার কমিয়ে দিতে হবে। প্রচণ্ড গরমের সময় গবাদি পশুকে কৃমিনাশক, টিকা কিংবা প্রাণীর পরিবহন পরিহার করতে হবে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

সমীরণ বিশ্বাস : লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App