×

জাতীয়

যেখানে একটি গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাবো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম

যেখানে একটি গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাবো

বুধবার দুপুরে ঐতিহ্য বলয়-৫ এর যাত্রাপথ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ছবি: ভোরের কাগজ

যেখানে একটি গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাবো

ঢাকা শহরকে পর্যটকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা। দ্বিতীয়টি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে করে তারা ঢাকার ঐতিহ্যকে অনুধাবন করতে পারে, উপভোগ করতে পারে। আমরা চাই পর্যটকরা ঢাকামুখী হোক। এজন্যই সাতটি ঐতিহ্যের বলয় আমরা সৃষ্টি করছি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

বুধবার (১০ মে) দুপুরে ঐতিহ্য বলয়-৫ এর যাত্রাপথ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এসব ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। ঐতিহ্যের বলয়-৫ চিহ্নিত করেছি। একজন পর্যটক যদি আসে তাহলে সে এই বলয়ের কোন কোন স্থাপনাগুলো দেখবে, কিভাবে সে চলাচল করবে, কি কি উপভোগ করবে? এই বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি সবকিছু আমরা নির্ণয় করব। তাদের জন্য সে সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করবো।

মেয়র বলেন, ৫ নম্বর বলয় নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি। অন্যান্য বলয়গুলোকেও সাজাবো। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। তারা যাতে আনন্দ করতে, উপভোগ করতে পারে, খাবার খেতে পারে। এ ধরনের সব সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে।

সাতটি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নিয়ে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির ৫ নম্বর বলয়। এটা আমাদের জাতীয় মন্দির। সারাবিশ্বেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের খ্যাতি রয়েছে। এর নান্দনিকতা ও স্থাপত্যশৈলী রয়েছে। সেইসঙ্গে ধর্মীয় আকর্ষণও আছে। সবমিলিয়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এরপর লালবাগ কেল্লা। যেটি বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত স্বনামধন্য স্থাপনা। লালবাগ কেল্লার ভাঙা অংশগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায় সেটাও এই বলয়ের আওতায় বিবেচনা করব। আরেকটি বলয় হলো আহসান মঞ্জিল কেন্দ্রিক। এরপর রুপলাল হাউজ, বড় কাটরা ও ছোটকাটরা নিয়ে।

ধানমন্ডিতে গাছ কাটা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, গাছ কাটা নিয়ে কেউ কেউ মর্মাহত হতেই পারেন, কষ্ট পেতেই পারেন। এটা তাদের আবেগের বিষয়। আবার অনেকেই ঢালাওভাবে অনেক কথা বলছেন। পূর্ণ তথ্য না নিয়েই কথা বলেন। আসলে উন্নয়ন কাজে অনেক সময় গাছ ফেলে দিতে হয়, কেটে ফেলতে হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু আমরা তখনই করি, যখন নিতান্তই আর কোনো উপায় নেই। সুতরাং যে গাছগুলোকে ফেলে দিতে হয়েছে বা কেটে ফেলতে হয়েছে সেই জায়গায় আমরা অবশ্যই অন্য গাছ লাগাব। আমরা তিনগুণ বেশি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি একটা গাছ অপসারিত হয় তাহলে সেখানে আমরা তিনটা গাছ লাগানোর লক্ষেই কাজ করছি। ওই সড়ক বিভাজনে আমরা আরো অনেক বেশি গাছ লাগাব। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমী প্রায় ১০ হাজার গাছ লাগাবো। সুতরাং এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, দুই বছরের আমরা দুই লাখ গাছ রোপণ করেছি। আদি বুড়িগঙ্গায় লাখের বেশি গাছ লাগাবো। আমাদের খালের প্রকল্পে লাখের বেশি গাছ লাগাব। সুতরাং ঢাকাকে সবুজ-শ্যামল করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শ ছাড়া গাছ কাটা হচ্ছে- এটা আসলে ঢালাওভাবে বলা। আমাদের তিনজন নগর পরিকল্পনাবিদ আছেন। আমি আসার পর থেকেই স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, ইতিহাসবিদসহ সবাইকে নিয়েই কাজ করছি। পরিকল্পনা কিন্তু কেউ দেখে না। পরিকল্পনা করে যখন আমরা কাজে যাই তখন অনেকে দেখেন। কিন্তু উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে আমাদের অনেক নেপথ্য কাজ করতে হয়। গাছ আমরা লাগিয়ে যাব। ঢাকাকে অবশ্যই সুন্দর, সবুজ নগরীতে পরিণত করবো।

ঐতিহ্য বলয় গড়ে তুলতে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আমাদের এখানে একটি ধারণা হচ্ছে উন্নয়ন মানে বুঝি শুধু অট্টালিকা নির্মাণ। কিন্তু উন্নয়ন মানে হলো অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের উন্নয়ন। আমি এর আগে কোনো মেয়রকে দেখিনি যিনি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের উন্নয়ন নিয়ে আগ্রহী। এই প্রথম কোনো মেয়র হিসেবে ফজলে নূর তাপস আগ্রহ দেখিয়েছে। এই কাজে যদি আমরা সবাই সহযোগিতা করি। আমার মনে হয় ঢাকার ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে ফুটে ওঠবে। আমরা সবাই সহযোগিতা করলে মেয়রের এই উদ্যোগ সফল হবে।

এর আগে মেয়র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ, করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম, কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আ স ম ফেরদৌস আলম, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আনোয়ার ইকবাল, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওমর বিন আব্দাল আজিজ ও সংরক্ষিত আসন-৭ এর শিরিন গাফ্ফার প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App