×

সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ১২:৩৫ এএম

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন

অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। বর্ধিত ঋণ সহায়তা ও বর্ধিত তহবিল সহায়তার আওতায় ৩৩০ কোটি ডলার এবং স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই সুবিধার অধীনে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ কিস্তিতে এই অর্থ পাবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে গত ২ জানুয়ারি প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের ঋণ সহায়তা দেশের অর্থনীতিতে সাময়িক স্বস্তি বয়ে আনে। তবে আর্থিক খাতে নীতিগত কিছু বিষয়ে সংস্কারের শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি। যাকে অভিহিত করা হয় স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম নামে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণ, জনস্বার্থ ও উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি ব্যয় সংকোচন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্য, জ¦ালানি ও কৃষিতে ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়াসহ নানা বিষয় শর্তাবলির আওতাভুক্ত। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমিয়ে দেয়া, মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেয়া ইত্যাদি। সাধারণত বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, কৃষি খাতে সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা হয়। আমরা দেখেছি, আইএমএফের শর্তানুযায়ী ভর্তুকি কমানো হলে বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্যের দাম। ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেয়া হলে সরকারের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কিছুটা কমলেও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তোলে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে বাড়ছে শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচালন ব্যয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ডলারের মূল্যমানে তারতম্য দেখা দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে, যাতে জনসাধারণের ওপর চাপ না পড়ে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জিত হয়। ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি- দেশের অর্থনীতিতে এ তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছে আইএমএফ। এসব কারণে দেশের প্রবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রার মজুত ও স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ তিনটির সঙ্গে আগামী নির্বাচনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি বলে মনে করি। নির্বাচনের আগেই দেশের অর্থনীতির সংস্কার, কাঠামোগত পরিবর্তন এবং বর্তমান প্রবাহ ধরে রেখে সামষ্টিক অর্থনীতির দিক ঠিক করতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় আমলে নিতে হবে। প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এসব ভূমিকা রাখবে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। করজাল বৃদ্ধিসহ রাজস্ব আহরণে এনবিআরের তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নতুন আয়কর আইন অটোমেশনে গুরুত্বারোপ জরুরি। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিশ্চিত করতে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App