×

মুক্তচিন্তা

মামলা, বিচার ও ভোগান্তি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৩, ১২:২২ এএম

বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। আমাদের দেশে আইন-আদালত, বিচার এসব নিয়ে কোনো রকম আলোচনা বা মন্তব্য করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি জটিল এবং স্পর্শকাতর। অথচ প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন একটা সত্তা আছে। কিন্তু সমাজে যে কোনো মানুষকে বিচারক বলা যায় না। শুধু যারা আইনস্বীকৃত আদালতে চূড়ান্ত রায় বা দণ্ড ঘোষণার দায়িত্ব পালন করেন, তারাই বিচারক বা বিচারপতি। আমাদের সমাজে বিচারপতি তো বটেই, বিচারকের পদটিও অত্যন্ত সম্মানীয় পদ। বিচারকরা বিচারালয়ে সব মামলা-মোকদ্দমার শুনানির পর দুপক্ষের বাদানুবাদের নিরপেক্ষ বিচার করে চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন। বিচারালয়ে একজন বিচারককে নানাবিধ ভূমিকা পালন করতে হয়। যেমন- ১. বিচারকদের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ মন দিয়ে শুনতে হয়। ২. সংবিধানের রক্ষক হিসেবে বিচারকদের ভূমিকা পালন করতে হয়। ৩. অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দুপক্ষের বক্তব্যকেই গুরুত্ব সহকারে শুনতে হয়। ৪. শুনানি চলাকালে একজন নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে হয়। ৫. সব জুরিকে নির্দেশ দিতে হয়। ৬. অভিযুক্তরা নির্দোষ না দোষী, তা খতিয়ে দেখতে হয়। ৭. দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সাজা ঘোষণা করা। ৮. শুনানির সময় আসামিদের সাজার মেয়াদ স্থির করা। ৯. আসামিদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। ১০. প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা-সংক্রান্ত নিয়মাবলি তাদের জানতে হয়। ১১. মামলাটি নিয়ে বিচারককে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। ১২. আদালতে চূড়ান্ত আইনি ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় চূড়ান্ত রায় ঘোষণাও বিচারককে করতে হয়। ১৩. এই রায় যাতে নিরপেক্ষ থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়। ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে’- এই বিশ্বাস বাক্যের কোনো ভিত্তি আমাদের দেশে অন্তত বড় বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে আইন কখনোই তার নিজস্ব গতিতে চলে না। কারণ আইন নিজে ‘চলতে’ পারে না। আইনকে ‘চালাতে’ হয়। আইনকে ‘চালান’ একদল ক্ষমতাবান মানুষ। ফলে আমাদের দেশের আইন ‘নিজে চলার’ চাইতে ‘চালানোর’ ওপরই নির্ভরশীল বেশি। যেখানে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা একটি স্বীকৃত মূল্যবোধ হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু সুবিচার পাওয়ার যে জন্মগত অধিকার সাধারণ মানুষের, সেটা এখনো ঠিক চোখে পড়ে না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। সংবিধানে বর্ণিত যে সার্বিক ন্যায়ের কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ রাজনৈতিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। বিচারব্যবস্থা নিয়ে আসলে অনেক নিয়ম-অনিয়ম রয়েছে। বলারও অনেক কথা ঘটনা আছে। আদালতপাড়ায় দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে মামলার ফাইল নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে বহু মানুষ। এ ধরনের হাজার হাজার মামলা আদালতপাড়ায় দেখা যায়। বিশেষ করে জমিজমা সম্পর্কিত মামলার সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হোসেইন নামে একজন মামলার বিবাদী আজ প্রায় তিন যুগ জমিজমা-সংক্রান্ত মামলার সমাধানের ফাইল নিয়ে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত দৌড়াচ্ছেন। মামলার রায় আদালত থেকে এক সময় বাদীর পক্ষে যায়, আবার সেটি অন্য কোর্টে গিয়ে খারিজ হয়ে যায়। এই লম্বা সময় উভয়পক্ষকে অনেকগুলো টাকা রাস্তায় ও মামলার পেছনে খরচ করতে হয়েছে। যে জমি নিয়ে মামলা এ দীর্ঘ সময় জমিটি চাষাবাদবিহীন রয়েছে। উভয়পক্ষ জমির মালিকানার কাছাকাছিও যেতে পারছে না। অর্থ, শক্তি, মনোবল সবকিছু হারিয়ে ফেলছে তারা। মোহাম্মদ হোসেইনের মতো আরো অসংখ্য মামলার বাদী-বিবাদী এ ধরনের মামলা নিয়ে আদালতপাড়ায় তাদের সর্বশক্তি শেষ করছে। কী হবে তাদের? এসব মামলার ফল এবং পরিণতি সাধারণ জনগণ হিসেবে আইন, বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য একটি কঠিন বিষয়। এ ধরনের মামলা বিচার ও বাদী-বিবাদীদের প্রকৃত দাবি সম্পর্কে সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে আর্জিটি পর্যবেক্ষণ থাকা জরুরি। যুগ যুগ ধরে এভাবে আদালতপাড়ায় মামলা ধরে রেখে বিচারব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারাধীন মামলা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া চাই। বিচারকে যেন সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও নিয়ম-নীতির মধ্যে পরিচালনা করা হয়, সেটিই জনপ্রত্যাশা।

মাহমুদুল হক আনসারী : লেখক ও সংগঠক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App