×

জাতীয়

ওয়াসার তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৩, ০৬:২১ পিএম

ওয়াসার তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ওয়াসা ও দুদকের লোগো।

প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট (পিপিআই) প্রকল্পের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৩ মে কমিশনের এক সভায় দুদক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই অনুমোদন দেয়া হয়। মামলার আসামি হচ্ছেন- পিপিআই প্রকল্প পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মিঞা মিজানুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক ও প্রকল্পের অফিস ব্যবস্থাপক মো. হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া এবং রাজস্ব জোন-৬-এর কম্পিউটার অপারেটর (আউটসোর্সিং) মো. নাঈমুল হাসান।

মঙ্গলবার (৯ মে) দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আরিফ সাদেক মামলা অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে দুই-একদিনের মধ্যে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা), ঢাকা-১-এ মামলা দায়ের করা হবে।

ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য পিপিআই প্রকল্পটি ১৯৯৬ সালে ঢাকা ওয়াসার সাতটি রাজস্ব জোনের (রাজস্ব জোন-৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ৮ ও ১০) সমন্বয়ে গঠিত। বেশুমার দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকল্পটি বিলুপ্ত করা হয়। দুদক থেকে পাওয়া নথি থেকে জানা গেছে- ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য ১৯৯৬ সালের নভেম্বর ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পিপিআই কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা ওয়াসার বিলিং ও মিটার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা ওয়াসার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার পাশাপাশি আয় বৃদ্ধি করে ওই সমিতিকে স্বাবলম্বী করে তোলা। চুক্তি মোতাবেক সমিতির অনুকূলে ওয়াসার বিল বাবদ ৬ শতাংশ কমিশন পাওয়ার কথা। পরে তারা কৌশলে কমিশনের পরিমাণ ১০ শতাংশ করে নেয়। কমিশনের অর্থ জমা হতে থাকে সমিতির নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে। ওয়াসার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা কৌশলে ওই অর্থ আত্মসাৎ করতে থাকে। পরে ঢাকা জেলা সমবায় অফিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মাত্র দুই অর্থবছরে প্রায় ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বর্তমানে সজেকা, ঢাকা-১-এর পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ও প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমানের সমন্বয়ে দুই সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দুদক। তাদের অনুসন্ধানে ২০১০ সাল থেকে প্রকল্প মেয়াদ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। অনুসন্ধানকালে ওয়াসার ১০ কর্মকর্তা ও ব্যাংক ম্যানেজারহ বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য নেয় দুদক।

দুদকের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিপিয়াই পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান ও কো-চেয়ারম্যান মিঞা মো. মিজানুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে পিপিআই প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়েছে। ওই সময়ে ঢাকা ওয়াসা থেকে কমিশন হিসেবে পাওয়া ১৩২ কেটি ৪ লাখ টাকা এবং বিধিবহির্ভূত ব্যায় আরো সাড়ে ৪৪ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ওয়াসা থেকে ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা কমিশন পায় সমিতি। হিসাব বিবরণীতে মাত্র ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা দেখানো হয়। অর্থাৎ ৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭০ টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকার হিসাব পায়নি অনুসন্ধান দল। এই বিপুল অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যায় হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পিপিআইর ব্যবস্থাপনা কমিটি। অনুসদ্ধানকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ আরো বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায়। দুদক ২০১০ সাল থেকে ওয়াসার কাছ থেকে প্রাপ্ত কমিশন, সমিতির আয়-ব্যায় ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করে। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান- আসামি মিঞা মিজানুর রহমান ও হাবিব উল্লাহ ভূইয়া প্রায় ২২ বছর পিপিআই প্রকল্পে কাজ করেন। দীর্ঘ সময়ে তারা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। মিঞা মিজানুর রহমান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রকল্পের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। আসামিদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান- তিন আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানকালে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা অনেক ব্যক্তিকে আসামি না করার বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। আরো যাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরও আসামি করা হবে। যদিও এ বিষয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App