×

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন জুড়ে রুশ বিমান হামলা, নিহত ৪

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৩, ১০:৪৬ এএম

ইউক্রেন জুড়ে রুশ বিমান হামলা, নিহত ৪

ছবি: সংগৃহীত

আজ ৯ মে, বিজয় দিবস উদযাপন করছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীর কাছে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের স্মরণে দিবসটি উদ্?যাপন করে ইউক্রেনসহ ইউরোপের অনেক দেশ। থাকে সরকারি ছুটি। এ বছর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া তা কিভাবে উদযাপন করছে সেদিকে নজর সারা বিশ্বের। এবার এই দিবসের আগে গত রবিবার রাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, এতে ধ্বংসযজ্ঞের পাশপাশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল সোমবার প্রথম প্রহরে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, কিয়েভে রাশিয়ার হামলায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর শহর ওডেসার একটি খাদ্য গুদামে আগুন ধরে যায়। ইউক্রেনের অন্য কয়েকটি অঞ্চলেও বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করেছিল সোভিয়েত লালফৌজ (রেড আর্মি)। বিজয়ের এ বার্ষিকী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। তিনি লালফৌজের চেতনা জাগিয়ে ‘নব্য নাৎসিবাদের খপ্পরে পড়া’ ইউক্রেনকে পরাজিত করার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর বাখমুতের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত শীর্ষ জেনারেল জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের মধ্যে শহরটির দখল নেয়ার জন্য রাশিয়া গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে। এর আগে শহরটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার নেয়ার পরিকল্পনা বাদ দেয় রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার গ্রুপ।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের পক্ষ থেকে দেয়া সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, দেশটির খারকিভ, খেরসন, মাইকোলাইভ ও ওডেসা অঞ্চলে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এছাড়া ইউক্রেনের জনবহুল এলাকাগুলোয় ৬১টি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছোড়া হয়েছে ৫২টি রকেট। এছাড়া হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ইরানে তৈরি অন্তত ৩৫টি রুশ ড্রোন। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সব ড্রোন ধ্বংস করেছে।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো এক টেলিগ্রামে পোস্টে জানিয়েছেন, কিয়েভের সোলোমিয়ানস্কিতে বিস্ফোরণে ৩ জন আহত হয়েছেন এবং এবং সিবাতোশিনে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আরো দুজন আহত হয়েছেন। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, নগরীর একটি বেসামরিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে, এতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটলেও জরুরি পরিষেবা সেখানে কাজ করছে। তারা আরো জানিয়েছে, কিয়েভের কেন্দ্রস্থলের শেকচেনিকভিস্কি এলাকায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সম্ভবত একটি দোতলা বাড়িতে আঘাত হেনেছে, এতে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ওডেসার সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র সের্হিও ব্রাচ্চুক তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে যে ছবিগুলো পোস্ট করেছেন সেগুলোতে বড় একটি স্থাপনায় পুরোপুরি আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্যান্য স্থাপনার পাশাপাশি এই খাদ্যগুদামটিতে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজার পর দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূবাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনার খবর পাওয়া যায়। জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়োজিত স্থানীয় কর্মকর্তা ভøাদিমির রগোভ জানিয়েছেন, অঞ্চলটির ছোট শহর ওরিখিভে অবস্থান নিয়ে থাকা ইউক্রেনীয় সেনা ও তাদের একটি গুদামে রুশ বাহিনী হামলা চালিয়েছে। পৃথকভাবে রাশিয়ার বাহিনীগুলো রবিবার ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমাই অঞ্চলের ৮টি এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে বলে অঞ্চলটির সামরিক প্রশাসন এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে।

গত দুই সপ্তাহে রাশিয়ার অধিকৃত এলাকাগুলোর, বিশেষভাবে ক্রিমিয়ার লক্ষ্যস্থলগুলোতেও হামলা জোরদার করেছে ইউক্রেন। এসব হামলায় নিজেদের কোনো ভূমিকার কথা স্বীকার না করে ইউক্রেন বলেছে, শত্রুর অবকাঠামো ধ্বংস করা তাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি।

রাশিয়া কিভাবে উদযাপন করছে, নজর সারা বিশ্বের : ঐতিহাসিক কারণে ইউরোপে বিভিন্ন দেশও ভিন্ন নামে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের স্মরণে দিবসটি পালন করে। ফ্রান্স ও স্লোভাকিয়ায় এদিন সর্বাত্মক ছুটি পালিত হয়। নাৎসিদের বিরুদ্ধে যারা জার্মানিতে লড়াই করেছেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণে ৮ মে দিবসটি পালন করে বার্লিন। নেদ্যারল্যান্ডসে এই দিবসটি পালিত হয় ৫ মে। আর রাশিয়া এটিকে বিজয় বা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ৯ মে। এ বছর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া তা কিভাবে উদযাপন করছে সেদিকে নজর সারা বিশ্বের।

জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রোডেরিখ কিজেভেটার মনে করেন, পুতিন আজ ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়োজিত হাজার হাজার সেনা সদস্যকে প্রভাবিত করতে পারেন। তথ্য অনুযায়ী, দেশটির অধিকৃত বন্দরনগরী মারিওপলে বড় ধরনের সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করতে পারে রুশ বাহিনী।

এদিকে দিনটি উপলক্ষে জার্মানিতে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের অনেকেই পুতিনের সমর্থনে সমাবেশের আয়োজন করতে পারেন বলে জানিয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন শহরে তারা গাড়িতে নিষিদ্ধ ‘জেড চিহ্ন’ প্রদর্শন করতে পারেন। ইউক্রেন হামলার সময় রাশিয়ার অনেক সেনাবহরে ইংরেজি জেড অক্ষরের প্রতীকটি দেখা গেছে। পরে জার্মানির কয়েকটি রাজ্য এই চিহ্ন ব্যবহারকারীকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সমর্থক বলে চিহ্নিত করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানী বার্লিনসহ বড় রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তারক্ষীরা বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে।

অবশেষে ভাগনার গ্রুপকে অস্ত্র দিচ্ছে রাশিয়া : রাশিয়ার বেসরকারি বাহিনী ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রবিবার জানিয়েছেন, মস্কো তাদের আরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে। গত কয়েক মাস ধরে বাখমুতে প্রবল লড়াই চলছে ভাগনার গ্রুপের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর। সেখানে ভাগনার গ্রুপের বহু সদস্য নিহত হয়েছেন।

কয়েকদিন ধরেই ভাগনার প্রধান জানাচ্ছিলেন, তাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার সেনা তাদের গোলাবারুদ না দিলে সদস্যদের বাখমুত থেকে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

গত কয়েক মাসের মধ্যে বাখমুতই ইউক্রেনের একমাত্র জায়গা রাশিয়া যা দখল করতে পেরেছে। তবে বাখমুত পুনরুদ্ধারের জন্য তীব্র লড়াই করছে ইউক্রেনের সেনা। ফলে বাখমুত কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

যুদ্ধের শুরুতে পূর্ব ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি জায়গা রাশিয়ার সেনা দখল করে। কিন্তু ইউক্রেন তার বেশ কয়েকটি পুনরুদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে। বাখমুত ইউক্রেন ও রাশিয়া কৌশলগত অঞ্চল বলে মনে করে। ফলে কোনো দেশই বাখমুত ছাড়তে চাইছে না। সে কারণেই যুদ্ধে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেসরকারি ভাগনার গ্রুপকে ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App