×

সাহিত্য

রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ১০:০৫ পিএম

রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন

সোমবার রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তীতে ছায়ানটের সঙ্গীতশিল্পীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন
রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন
রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন
রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন
রবির কিরণে উজ্জ্বল সংস্কৃতি ভুবন

রবির কিরণ ছড়িয়ে পরার পর থেকেই শুরু হয়েছে রবি বন্দনা। শহর রাজধানী থেকে গ্রাম-মফ্স্বল। সর্বত্র গানে-কবিতায় চলছে রবীন্দ্র স্মরণ। কেনই বা চলবে না? কবিগুরু যে বাঙালির মননে, সৃজনে, কল্পনায়, চেতনায় কিংবা অবচেতনে সবসময় জড়িয়ে শান্তি সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের বাতিঘর হিসেবে। রবীন্দ্র ভূমির অসামান্য সৃষ্টির আলোয় স্মরণ করা হয়েছে কবিকে। জানানো হয়েছে হৃদয় উৎসারিত ভালোবাসা। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে কিংবা নৃত্যশৈলীতে প্রকাশিত হয়েছে কবি বন্দনা। বিশ্বকবির জন্মদিনের আলোয় উজ্জ্বল রূপ নিয়েছে শহরের সংস্কৃতি ভুবন।

ছায়ানট কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ছায়ানট দুইদিনব্যাপী রবীন্দ্র-উৎসবের আয়োজন করেছে। সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এই উৎসবে পরিবেশিত হয়েছে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও অংশ নেন আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল। ‘তোমার প্রেমে ধন্য কর যারে’ শীর্ষক সম্মেলক গান পরিবেশন করেন ছায়ানট শিল্পীরা। ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’ শীর্ষক সম্মেলক নৃত্যগীত পরিবেশন করেন ছায়ানট শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী আঞ্জুমান আরা পর্ণা। পাঠ করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও শিল্পী পার্থ প্রতীম রায়।

‘তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভ’রে’, ‘অসীম ধন তো আছে তোমার’, ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো’ ‘আমার হিয়ার মাঝে’, ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে’, ‘আজি যত তারা তব আকাশে’, ‘আপনি বরিয়া লয়েছিলে এনেছি অশ্রুবারি’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’, ‘আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে’, ‘একটাও এসে পড়ে না, ‘তোমায় নতুন করে পাব ব’লে’, ‘ওদের সাথে মেলাও যারা’, ‘মেঘ বলেছে ‘যাব যাব’, ‘অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ’, ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’, ‘তোমার আমার এই বিরহের অন্তরালে’, ‘গানের ভিতর দিয়ে যখন’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘আমার মন মানে না- দিনরজনী’, ‘আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি’, ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি’। এসব একক ও সম্মেলক গান গেয়ে শোনান শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য, শিল্পী মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা, শিল্পী সত্যম কুমার দেবনাথ, শিল্পী তানিয়া মান্নান, সেঁজুতি বড়ুয়া, আব্দুল ওয়াদুদ, স্বাতী বিশ্বাস, মাকছুরা আখতার অন্তরা, ফারজানা আক্তার পপি সংযুক্তা দাস। কথনে অংশগ্রহণ করেন ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।

উদীচী গান-আবৃত্তি-কবিতা আর কথামালায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ১৬২তম জয়ন্তী উদযাপন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সন্ধ্যায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে এতে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, কোষাধ্যক্ষ বিমল মজুমদার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজন রায় এবং আরিফ নূর। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। অনুষ্ঠানে দলীয়ভাবে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ’ গানটি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এছাড়া, একক গান গেয়ে শোনান কানিজ ফাতেমা সূচী, সুস্মিতা কীর্তনিয়া, রাখি কর্মকার, সাজেদা বেগম সাজু এবং জুঁই। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৈয়দা রত্না, সুমিত পাল এবং মিজানুর রহমান সুমন।

আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, বাঙালির মানস গঠনে যে কয়েকজন মানুষ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে প্রধানতম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্যকে সারাবিশ্বের দরবারে পরিচিত করার ক্ষেত্রেও প্রধানতম ভূমিকা রেখেছেন কবিগুরু। যাপিত জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিচরণ করেননি বিশ্বকবি। কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ থেকে শুরু করে সাহিত্যের সবগুলো শাখায় অনায়াস বিচরণ ছিল তার। যার মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতি, অর্থনীতি তথা পুরো সমাজের আমূল পরিবর্তন। সারাজীবনই নতুনের জয়গান গেয়েছেন কবিগুরু। আধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচাতে সবুজ, কাঁচাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বারবার। নানা সংকট, আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশায় বারবারই মানুষ রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়েছে। খালি হাতে ফেরাননি বিশ্বকবি। এখনও যখন মাঝেমধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার আস্ফালন দেখা যায়, যখন বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় মৌলবাদ, তখনও ঢাল হয়ে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ।

জাতীয় জাদুঘর বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘সমাজ সংস্কারক ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মূখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. কামরুজ্জামান।

সেমিনার ও আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দেবলীনা সুর।

বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করল বাংলা একাডেমি।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তব্য দেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র-গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শীলা মোমেনকে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। তার হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা-স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম ও সায়েরা হাবীব। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম ও কমলিকা চক্রবর্তী।

একক বক্তা সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আগাগোড়া একজন স্বনির্মিত মানুষ। তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ের সূত্রে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন; এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা যেমন করেছেন তেমনি পূর্ববঙ্গের এই সাধারণ মানুষই তার সাহিত্যকে দান করেছে নতুন গতিপথ।

শিল্পকলা বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন করল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ উপলক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত জেলাসহ সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘আর্টক্যাম্প- রঙ তুলিতে বিশ্বকবি’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকা, শিলাইদহের কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর, নওগাঁর পতিসর, খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগসহ দেশের ৬ টি জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই আর্টক্যাম্প। এতে অংশ গ্রহণ করেন বিশিষ্ট বরেণ্য শিল্পীগণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুশিল্পীসহ ৬০ জন শিল্পী। আর্টক্যাম্পে বিশিষ্ট ও বরেণ্য শিল্পীদের রংতুলিতে ওঠে আসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শন, সাহিত্য, গান ও কবিতার নানান বিষয়বস্তু।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে শুরু হয় এ আর্টক্যাম্প। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার সৃষ্টিকর্মের উপর নির্মিত এসব চিত্রকর্ম নিয়ে ৮-১৪ মে পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। জাতীয় চিত্রশালার ৪ নং গ্যালারিতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। এছাড়া, শুক্রবার এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকায় দিনব্যাপী ‘রং তুলিতে রবীন্দ্রনাথ’ শিরোনামে আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহন করেন দেশের বরেণ্য, বিশিষ্ট ও প্রতিশ্রুতিশীল চারুশিল্পীদের মধ্যে শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী শহিদ কবির, শিল্পী বীরেন সোম, শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, শিল্পী আব্দুল মান্নান, শিল্পী ফরিদা জামান, শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী, শিল্পী হামিদুজ্জামান খান,শিল্পী লায়লা শারমিন, শিল্পী নাসরিন বেগম, শিল্পী সনজিব দাস এবং শিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস। আর্টক্যাম্প শেষে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। দেশ বরেণ্য, বিশিষ্ট ও প্রতিশ্রুতিশীল চারুশিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম ছাড়াও এই প্রদর্শনীতে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ৪৫টি চিত্রকর্ম। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক ড. সরকার আবদুল মান্নান এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা হিলালী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ঋত্বিক নাট্যজন জনাব লিয়াকত আলী লাকী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App