হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা বর্ষায় পানিতে চারদিকে টইটুম্বুর হয়ে যায়। তখন গরু মাঠে চড়ানো জায়গা না থাকায় বর্ষায় দেখা দেয় গো-খাদ্যের অভাব। আর এ অভাব পূরণের বিকল্প হিসেবে শুকনো খড় বাড়িতে তুলে রাখেন কৃষকরা। শুকানো খড় ঘরে তুলতে পারলে বর্ষায় গো-খাদ্য নিয়ে চিন্তা করতে হয় না কৃষকদের। অন্যথায় বর্ষায় গো-খাদ্য নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের পর গো-খাদ্য সংগ্রহ করতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, ধান শুকানোর পর এখন খড় শুকাতে কৃষকদের কর্মযজ্ঞ। প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেও হাওরের উঁচু স্থান, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে ধান গাছের কাঁচা খড় শুকাচ্ছেন কৃষকরা। দিনভর খড়ের এপিঠ-ওপিঠ শুকিয়ে কেউ কেউ হাওই খলায় খড়ের গাদা দিয়ে রাখছেন। একসময় এগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। আবার অনেককেই দেখা যায় বাড়ির আঙ্গিনায় উৎসবের আমেজ নিয়ে বড় বড় খড়ের গাদা দিয়ে রাখতে। কেউ আবার এসব খড় দিয়ে টিন সেটের ছাউনি বানিয়ে রাখছেন। খলায় মাড়াইকৃত ধান শুকানোর পাশাপাশি কৃষকরা এখন গো-খাদ্য সংগ্রহের ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তারা পাকা ধানের মাড়াইকৃত কাঁচা গাছের অংশ শুকিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় খড়ের গাদা দিয়ে উঁচু করে জমা করে রাখছেন কৃষকরা।
জানা যায়, গত ২০১৬-১৭ সালে বন্যায় হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে গেলে দেখা দেয় গো-খাদ্য সংকট। অনেকেইে তখন বাধ্য হয়ে কম মূল্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিজেদের পালন করা পশু বিক্রি করতে বাধ্য হন। এবার শান্তিগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানে ঘরে তুলে স্বস্তিতে প্রতিটি কৃষক পরিবার। এখন খড় শুকানো নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন৷
খাই হাওরের ঠাকুরভোগ গ্রামের কৃষক আনোয়ার ৫ কেয়ার জমি চাষ করেছিলেন। ভালোভাবে ধান উঠেছে তার গোলায়। ঘরে ৩টি গরু আছে। বর্ষাকালে খড়ই গরুর খাদ্যের একমাত্র ভরসা। তাই তিনি নিজেই খড় শুকানো কাজে এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কয়েকদিন টানা রোদ থাকায় খড় শুকাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, বাড়ির আঙিনায় খড় নিয়ে যেতে পারলেই হল। বর্ষায় গরুর খাদ্যের জন্য চিন্তা করতে হবে না।
আরেক কৃষক সমছুল হক বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। ধান ঘরে তুললেই বৈশাখ শেষ হয়ে যায় না, বর্ষায় গরুর খাদ্যের সংকট দূর করতে খড়ের ওপর নির্ভর করতে হয় আমার মতো হাওরপাড়ের কৃষকদের। তাই এখন ধান শুকানোর পাশাপাশি খড় শুকিয়ে সংগ্রহ করছি। আশা করছি ভালোভাবেই খড়ও সংগ্রহ করতে পারবো। গরুর খাবারের জন্য এবার বর্ষায় চিন্তা করতে হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎসবমূখর পরিবেশে ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা৷ ফলন ও ধানের ধান ভালো থাকায় খুশি হাওরপাড়ের কৃষকরা। ধান ঘরে তুলে তারা এখন গো-খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন৷
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।