সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান বি. চৌধুরীর

আগের সংবাদ

লন্ডন থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হলেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে যে কারণে নিষিদ্ধ দ্য কেরালা স্টোরি

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৩ , ১১:২৪ অপরাহ্ণ আপডেট: মে ৮, ২০২৩ , ১১:২৭ অপরাহ্ণ
ইউটিউবে ছবির ট্রেলার দেখেই বিতর্কের মেঘ ঘনিয়েছিলো ভারতের রাজনীতির আকাশে, বাতাসে। মুক্তির পর তোলপাড় ফেলে দিয়েছে সুদীপ্ত সেন পরিচালিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ছবিটিকে অনেকে সমর্থন করছেন, আবার কেউ কেউ এর বিপক্ষে সরব হয়েছেন
কিন্তু ঠিক কী আছে এই ছবিতে? কেন ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক? অনেকে বলছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মির ফাইল্‌স’ সিনেমাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে অদা শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’
ছবিটির মূল চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, তা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত। এই ছবিতে হিন্দু নারীদের ওপর ‘ইসলামী’ আগ্রাসনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় মেরুকরণে জোরদার হয়েছে বিতর্ক
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। এই হিন্দু তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে উঠেছেন ফতিমা। অর্থাৎ, ধর্মান্তরিত করা হয়েছে তাকে। পরিকল্পনামাফিক ‘ফাঁদ’ পেতে শালিনীকে ফতিমা করে তোলার কাহিনি দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত
শুধু হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে যাওয়াই নয়, এই ধর্মীয় পরিবর্তন শালিনীর জীবনেও বয়ে এনেছে চরম দুর্ভাগ্য। সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় তাকে। ধর্মান্তরিত নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’
সুদীপ্ত নিজে অবশ্য ছবিটিকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলার ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তৈরি করেছেন তিনি। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম ও তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ
তিনজন নারীকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বলে দাবি পরিচালক সুদীপ্তের। তিনি জানিয়েছেন, যাদের কাহিনি এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, তাদের এক জন এখনো আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অপরজন আত্মহত্যা করেছেন, বিচারের অপেক্ষায় তার মা-বাবা। অপর মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন যাকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়েছে
এই ছবিকে এরই মধ্যে করমুক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একাধিক রাজ্যে বিজেপি নেতা হিন্দু নারীদের জড়ো করে ছবিটি দেখাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, গোটা ভারতের সমস্যার কথা বলা হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে। এদিকে, যে কেরালাকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই বামশাসিত রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিলো। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন স্পষ্ট জানান, ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দিতে এই ধরনের ছবি তৈরি হয়েছে। সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিজেপিবিরোধী দলগুলো একযোগে ছবিটিকে ‘প্রচারসর্বস্ব’ কিংবা ‘রাজনৈতিক প্রচারমূলক’ আখ্যা দিয়েছে। সংঘ পরিবারের দিকেও অনেকে আঙুল তুলেছেন
বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ভোট প্রায় দোরগোড়ায় এসে ঠেঁকেছে। সেখানেও নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে শোনা গেছে সুদীপ্তের এই ছবির কথা। মোদির দাবি, সমাজে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দেবে এই ছবি। মুক্তির আগে ছবিটি থেকে অন্তত ১০টি দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির ওপর কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কেরলের সাবকে মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশও বাদ পড়েছে। বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিলো। তাই সেসব দৃশ্য বাদ পড়েছে। ছবিতে একটি সংলাপ ছিলো, যেখানে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দুমুখো’। ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে এই সংলাপ থেকে
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির একটি দৃশ্যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগামী দুই দশকে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে। বিতর্কিত সংলাপের জন্য গোটা দৃশ্যই বাদ দেয়া হয়েছে
ছবির নায়িকা অদা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। সমালোচকদের কাছে তার আর্জি, যারা বিতর্কে ইন্ধন দিচ্ছেন, তারা আগে ছবিটি দেখুন। তারপর তা নিয়ে মন্তব্য করবেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছেন অদা। অনেকে বলছেন, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে সুদীপ্তের এই ছবি বিতর্কে ঘি ঢেলেছে। বিজেপিও ভোটের মুখে ছবিটিকে আঁকড়ে ধরেছে

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়