×

সারাদেশ

প্রেমিকার বাবার হাতে প্রেমিকের মৃত্যু, সংবাদ শুনে মারা গেলেন বাবাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম

প্রেমিকার বাবার হাতে প্রেমিকের মৃত্যু, সংবাদ শুনে মারা গেলেন বাবাও

ছবি: ভোরের কাগজ

প্রেমিকার বাবার হাতে প্রেমিকের মৃত্যু, সংবাদ শুনে মারা গেলেন বাবাও

কুমিল্লার আদর্শ সদর এলাকার মাঝিগাছা গ্রামে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসে প্রেমিকার বাবা ও চাচার পিটুনিতে আহত হয়ে মারা গেছেন মোহাম্মদ মাহীন (২২) নামে এক যুবক। এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে আধঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান মাহিনের বাবা হিরন মিয়াও (৫৫)।

রবিবার (৭ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানার ছত্রখীল ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলার মধ্য মাঝিগাছা গ্রামের মোজা মিয়ার কন্যা তন্নী আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই এলাকার স্থানীয় চা-দোকানি হিরন মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মাহিনের। এরই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে তন্নীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে আসেন মাহিন। এসময় তন্নীর বাবা এবং চাচা জাহাঙ্গীর আলম মাহিনকে ধরে ব্যাপক মারধর করে। একপর্যায়ে তারা ইট দিয়ে মাহিনের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মাহিনকে তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা নিয়ে রবিবার বেলা এগারটার দিকে বাড়িতে ফেরেন মাহিন।। বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পর তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে তাকে আবারও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছেলের মৃত্যুর খবর সইতে না পেরে মাহিনের বাবা বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকেও কুমেক হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মাহিনের প্রেমিকা নুসরাত জাহান তন্নি বলেন, রমজান মাসের শুরুর দিকে আমি ও মাহিন আদালতে মাধ্যমে বিয়ে (কোর্ট ম্যারেজ) করি। বৃহস্পতিবার রাতে মাহিন আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। রাত এগারোটার দিকে সে আমাদের ঘরের সামনে আসলে আমার বাবা ও চাচা জাহাঙ্গীর আলম তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের পর তারা ইট দিয়ে মাহিনের বুক ও মাথা থেতলে দেয়। ধস্তাধস্তি শুনে আমি ঘরের বাইরে এসে দেখি মাহিন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু আমি যেন চিৎকার করতে না পারি এজন্য আমার চাচি আমার মুখ চেপে ধরে। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, আর কিছু বলতে পারব না।

তন্নী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর আজ সে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পর সে বুকে ব্যথা অনুভব করে এবং একটু পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। যারা আমার মাহিনকে খুন করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তন্নীর বাবা মোজাম্মেল ও তন্নীর চাচা জাহাঙ্গীর মাহিনকে বেধড়ক মারধর করেছে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আজ রবিবার সে বাড়ি ফিরে। কিন্তু একটু পরেই পুনরায় বুকে ব্যথা অনুভব করে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই খবর শুনে অসুস্থ হয়ে তার বাবা হিরণ মিয়াও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাহিন এবং হিরণের মৃত্যুর পর তন্নীর বাবা, চাচা ও পরিবারের সদস্যরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে।

তিনি বলেন, একটি সামান্য ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসীকে ব্যথিত করেছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল কামরান হোসেন এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনজুর মোরশেদ খান। তারা বলেন, মাহিনের মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা নিহতদের স্বজন ও মাহিনের প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলেছি। তন্নীর ভাষ্য, রমজানের শুরুর দিকে তারা কোর্ট ম্যারেজ করেছিলেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় কারা জড়িত এবং কোন আঘাতে মাহিনের মৃত্যু হয়েছে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App