×

জাতীয়

তৃণমূল বিএনপির হাল ধরলেন নাজমুল হুদার মেয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:৩৫ এএম

তৃণমূল বিএনপির হাল ধরলেন নাজমুল হুদার মেয়ে

ছবি: সংগৃহীত

আড়াই মাস আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপির হাল ধরলেন প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা। আগামী বছর দলের কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

ঢাকার গুলশানের ‘শাইনপুকুর’ স্যুটসের সিগনেচার হলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী তৃণমূল বিএনপির উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সিগমা হুদা। এ সময় তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব শেখ হাবিবুর রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন মায়ের পাশের চেয়ারে বসা ছিলেন অন্তুরা হুদা। নাম ঘোষণার পর অন্তরাকে নেতারা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য নাজমুল হুদা ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে দলটি ইসির নিবন্ধন পায়। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর থেকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যানের পদটি ফাঁকা ছিল। ৭৬ দিন পর নতুন নেতার নাম ঘোষণা হলো।

ব্যারিস্টার সিগমা হুদা বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার চিন্তা-চেতনা এবং আদর্শ ধারণ ও বহন করেন এমন ব্যক্তিত্বকে দলীয় নেতৃত্বে আনার লক্ষ্যে গত শুক্রবার তৃণমূল বিএনপির সাধারণ সভায় দলের মরহুম চেয়ারম্যানের বড় কন্যা এডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হয়। আমরা প্রত্যাশা করছি, তার নেতৃত্বে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে তৃণমূল বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। বর্তমান কমিটি অ্যাডহক ভিত্তিতে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম কাউন্সিল সভা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও পার্টি ফান্ড ও নির্বাচনী ফান্ড সংগ্রহ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সমানে রেখে দেশের ৩০০টি আসনে দলের প্রার্থীর তালিকা তৈরি করা হবে।

এরপর বক্তব্য রাখেন নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা। তিনি বক্তব্য শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করেন। এরপর আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। দলটির আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অন্তরা হুদা বলেন, যদি পরিবেশ হয়, নির্বাচনে অবশ্যই আমরা যাব। সেই নির্বাচন কি জোটবদ্ধ হয়ে, না এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে। আমরা কেবল যাত্রা শুরু করলাম।

তিনি বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ও অসমাপ্ত কাজগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমি এই দায়িত্ব পালনে সম্মত হই। দলের সব সদস্য ও দেশের জনগণকে নিয়ে যেন দেশের জন্য ও দেশের জনগণের জন্য এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারি, এজন্য গণমাধ্যম ও দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা ও দোয়া চাই।

যেভাবে এল তৃণমূল বিএনপি : ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে দলটির প্রথম স্থায়ী কমিটিতে সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। জিয়ার মৃত্যুর পর স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠিত হলে তিনি বাদ পড়েন। খালেদা জিয়ার সময়ে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় তিনি তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। মাঝে একবার বহিষ্কৃত হলেও পরে দলে ফেরানো হয় তাকে।

ওয়ান-ইলেভেনে পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে যেতে হয় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে। জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১০ সালে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য রাখলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল বিএনপির সদস্যপদ ফিরে পান তিনি।

এরপরে ২০১২ সালের ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নিজেই বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেন। ওই বছরই তিনি গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ। পরে সেখান থেকেও বহিষ্কৃত হয়ে ২০১৪ সালের ৭ মে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ’ এবং ওই বছরের ২১ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি-বিএমপি’ গঠন করেন তিনি।

এরপর তিনি ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর গঠন করেন তৃণমূল বিএনপি। নতুন এই দলটির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে আবেদন করেন তিনি। নিবন্ধন না পেয়ে তিনি আদালতে যান। ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূল বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক- সোনালি আঁশ এবং দলীয় স্লোগান হচ্ছে- ‘সুস্থ রাজনীতি, সুশাসনের ভিত্তি’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App