×

জাতীয়

মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ০৮:৪৩ এএম

মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ

ছবি: সংগৃহীত

থেমে থেমে বৃষ্টি বাড়াচ্ছে শঙ্কা ঢাকার বাইরে বাড়তে পারে রোগী

হঠাৎ করেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। ঈদের ছুটির পর থেকে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরজুড়েই মেলে ডেঙ্গুরোগী। সাধারণত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৪ মাস হলো ডেঙ্গুর মূল মৌসুম। তারা বলছেন, মৌসুমে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়বে- এটি স্বাভাবিক। তবে গত কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গুজ¦রের বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে, যা শঙ্কা জাগিয়েছে। আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গু শুধু শহর এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল না। শহর থেকে গ্রাম এবং পাহাড়ি এলাকায়ও এই ডেঙ্গুরোগী ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়; সেগুলো যেন শুধু ঢাকা বা শহরকেন্দ্রিক না থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, মার্চ-এপ্রিলে বেশি বৃষ্টি হয়নি। সেদিক দিয়ে বললে এডিসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কম থাকতে পারে। সামনের দিনগুলো কেমন হবে তা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টিটা শঙ্কা বাড়াচ্ছে। আমি মনে করি- মশা নিধন, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, লার্ভা নিধনের মতো কার্যক্রমগুলো যদি কার্যতই চলমান থাকে- তাহলে এ বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতা মহামারি আকারে পৌঁছাবে না। এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান নয়। তবে আমি আশা করি, আগের ভুলগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নেব।

এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও এডিস মশার ঘনত্ব বুঝতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তিনটি সার্ভে করা হয়- বর্ষাপূর্ববর্তী, বর্ষাকাল ও বর্ষাপরবর্তী মৌসুম। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসটাকে ধরা হয় বর্ষাপূর্ববর্তী, জুন ও জুলাইকে ধরা হয় বর্ষা মৌসুম এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসকে ধরা হয় বর্ষাপরবর্তী মৌসুম। সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রথম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয় ৯ এপ্রিল। ওই সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা বছর কার্যক্রম চলবে।

চলতি বছর মধ্য এপ্রিলে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্ষাকালপরবর্তী জরিপে ঢাকার ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে বলে জানানো হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি কিছুটা বেশি পাওয়া গিয়েছিল। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১০৮ ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়। তবে এই জরিপের তথ্য দিয়ে বর্তমান এবং আগামীর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এডিস মশার যে জীবনচক্র ফেব্রুয়ারিতে ছিল, তা এখন নেই। এপ্রিলে নতুন জীবনচক্র শুরু হয়েছে। এপ্রিল-মে মাসে যে জরিপ হবে তার ফলাফল দিয়ে বোঝা যাবে এ বছর পরিস্থিতি কেমন হবে। মাঠের যে তথ্য তা বলছে, চলতি মে মাসে এডিস মশা বেড়েছে। বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া এটি মৌসুম। তবে এখনই প্রকৃত চিত্রটা কী তা বলা যাচ্ছে না। চলতি মাসে আমাদের একটি সার্ভে হবে। সেটি হলে হয়তো বলা যাবে। এটুকু বলা যায় শঙ্কা বাড়াচ্ছে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকার বাইরে বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী কিছুটা বেড়েছে। এটি কয়েকটি কারণে হতে পারে। ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর রোগীর রিপোর্টিং বেড়েছে। আবার ঈদের মধ্যে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয় না। ছুটি শেষে অনেকেই ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গুর মৌসুম যেহেতু শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে রোগী কিছুটা বাড়বে এটা বলা যায়। তবে যতটা বাড়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এটা আমি নিশ্চিত। এই মুহূর্তে এত বাড়ার কথা নয়।

এই মুহূর্তে করণীয় প্রসঙ্গে ড. কবিরুল বাশার বলেন, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই পর্যায় থেকেই এডিস মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার রাখা জরুরি। অব্যবহৃত পাত্র যেখানে পানি জমে মশা বংশ বিস্তার করতে পারে- সেটি যাতে কোথাও না থাকে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব আছে। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়েও আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়েছে, এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০০ সালে প্রথম এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হন, আর মারা যান ৯৩ জন। এরপর থেকে ডেঙ্গুরোগী কমবেশি পাওয়া গেলেও এই রোগের ব্যাপকতা দেখা দেয় ২০১৯ সালে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ এ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। ২০২১ সালে রোগী ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন আর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। আর ২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৭৬৩ জন। এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৮১ জন। যা মৃত্যুর রেকর্ড গড়া ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

সরকারের এই তথ্য নিয়ে রয়েছে ভিন্নমতও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে তা প্রকৃত রোগীর একটা অংশ। কারণ, সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। যে কারণে ওইসব সেবা প্রতিষ্ঠানের রোগীর তথ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। আবার অনেক রোগী সাধারণ জ্বর মনে করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এসব রোগীর তথ্যও সরকারের তালিকায় নেই। ফলে প্রকৃত ডেঙ্গুরোগীর সঠিক সংখ্যা কখনোই জানা সম্ভব নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App