×

সারাদেশ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা উত্তোলনের রেকর্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা উত্তোলনের রেকর্ড

ছবি: ভোরের কাগজ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা উত্তোলনের রেকর্ড
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা উত্তোলনের রেকর্ড

মিললো ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা

এ টাকা কোথায় যায়, কোন কাজে ব্যবহার হয়?

কিছুদিন আগে আমার দিদি খুব অসুস্থ হয়, তখন পাগলা মসজিদে সুস্থতার জন্য মানত করি। এখন দিদি সুস্থ তাই মানত অনুযায়ী দান করতে এসেছি। কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগল মসজিদে সুদূর নেত্রকোনা থেকে ছুটে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বী তৃপ্ত দত্ত।

কথিত রয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগল মসজিদে খাস দিলে যে-কোন মানত করলে তার মনোবাসনা পূর্ণ হয়। আর এমন বিশ্বাস থেকে প্রতিদিন এ মসজিদে হাজার হাজার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মানত ও টাকা দান করেন। কেউ রোগ মুক্তি জন্য, কেউ মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য দান করেন। শুধু মাত্র মুসলিম ধর্মাবলম্বী নয় এমন বিশ্বাস থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। আর এ-সব দান বক্স থেকে এবার রেকর্ড পরিমাণ পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা পাওয়া গেছে।

প্রতি তিন মাস পর পর বাক্সগুলো খোলা হলেও এবার চার মাস পর খোলা হয়েছে এ দান বক্স। আর এতেই মিলেছে পাগলা মসজিদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টাকা। এ ছাড়াও দান বক্স গুলোতে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।

শনিবার (৬ মে) সকাল আটটায় মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এর পর এক এক করে ১৯টি বস্তায় ভরা হয় বক্সে টাকাগুলো এবং গণনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদে দুইতলায়। সেখানে মসজিদ কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে একে একে বস্তাগুলো ঢেলে গণনার কাজ শুরু করা হয়। ২০৪ জন মিলে শনিবার দিনভর এ টাকা গণনার কাজ করেন। গণনা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে রেকর্ড পরিমাণ টাকা পাওয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এবার টাকা গণনার কাজে মাদ্রাসার ১০০ খুদে ছাত্র, ব্যাংকের ৬০ স্টাফ , মসজিদ কমিটির ৩৪ জন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ সদস্য কাজ করছেন।

তিনি জানান, প্রতি ৩ মাস পরপর পাগলা মসজিদের ৮টি দানবাক্স খোলা হয়। এবার চারমাস পর খোলা হলে ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ৩ মাস ৬ দিন পর দানবাক্স খোলা হলে ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। দিনব্যাপী টাকা গণনা শেষে রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।

পাগলা মসজিদের দান বক্স থেকে প্রাপ্ত এ টাকা কোথায় যায়, কীভাবে ব্যবহার হয় এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ কাছে। তিনি জানান, শুরুতে দান বক্সে এত টাকা মিলতো না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কয়েক লাখ, লাখ থেকে কোটি ছাড়িয়ে যায় এবং দিন দিন টাকার অংক বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে পাগলা মসজিদের দান বক্স থেকে রেকর্ড চার কোটির বেশি টাকা পাওয়া যায়।

তিনি জানান, শুরুতে দান বক্সে পাওয়া টাকা থেকে আশপাশের মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন মানুষের অসহায়ত্বে দান করা হতো। বর্তামানে আড়াই থেকে তিন বছর ধরে দান বক্স থেকে প্রাপ্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হচ্ছে। উদ্দেশ্য পাগলা মসজিদের এই স্থানে, এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী একটি আধুনিক দৃষ্টি নন্দিত মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা।

তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগল মসজিদের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের অনেক আবেগ জড়িত। দেখা যায় একজন মানুষ দোকান খুলবে, দোকান খোলার আগে মসজিদে কিছু দান করে দোকান খুলছেন। আবার যখন দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরবে তখনও কিছু অর্থ দান করে বাসায় যাচ্ছেন। এখানকার মানুষের একটা স্বপ্ন এখানে একটি আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স স্থাপন হবে। হাজার হাজার মানুষ এক সঙ্গে নামাজ আদায় করবে। আপনারা জানেন, শুক্রবার হলে দেশে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এখনে আসেন নামাজ আদায় করেন, দান করেন। সারাদেশের মুসল্লিদেরও একটা আবেগ জড়িত এখানে। তাই আমরাও চাই এখানে দৃষ্টিনন্দিত একটি মসজিদ হোক।

আপনারা ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন, প্রায় একশ দশ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য পরামর্শ নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগ শেষ হলে চূড়ান্ত ডিজাইন করা হবে ।

বর্তমানে মসজিদ একাউন্টে কি পরিমাণ টাকা জমা আছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু করার মতো টাকা মসজিদের একাউন্টে জমা আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App