×

জাতীয়

জবি অধ্যাপকের ওপর ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

জবি অধ্যাপকের ওপর ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা

শুক্রবার খুলনার কয়রা উপজেলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধ্যাপকের ওপর হামলা চালান এক ইউপি চেয়ারম্যান। ইনসেটে হামলাকারী ইউপি চেয়ারম্যান। ছবি: ভোরের কাগজ

খুলনার কয়রা উপজেলায় উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদের কথা অনুযায়ী ফেল করা প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার অস্বীকৃতি জানালে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ এসেছে।

গত শুক্রবার (৫ মে) রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর গুরুতর আহত হলে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে প্রথমে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে এ হামলার ঘটনায় তিব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে, ভুক্তভোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার কয়রা উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। তিনি সেখানে নিয়োগবিধি অনুযায়ী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ পদে লিখিত পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি। তারপরও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ তার পছন্দের প্রার্থী মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন।

এ সময় অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চান। এরপর তিনি ও নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধির গাড়িতে করে ফেরার পথে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে তাদের গাড়ি থামিয়ে প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওই শিক্ষককে চড় মারেন ও তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ওই অধ্যাপককে ফেলে রেখে ডিজির প্রতিনিধি চেয়ারম্যানের কথামতো নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে চলে যায়।

কিন্তু জবির এই অধ্যাপক রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা ২০-২৫ জন লোক তাকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর চেয়ারম্যানের বাড়ির একটি কক্ষে আটকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে। জোরপূর্বক নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়।

এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এর আগে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিয়োগ পরীক্ষা শেষে তিনি আমার বাড়িতে নাশতা করতে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, অধ্যাপক নজরুল এখন ঢাকায় ফেরার পথে। তার ওপর হামলার বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএমএস দোহা বলেন, হামলার শিকার ওই শিক্ষক দ্রুতই অভিযোগ দায়ের করবেন। এরপরই আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জবি শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ: এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)।

শনিবার (৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মো আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড একেএম মো লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে ওই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সেখানে রাষ্ট্রীয় কাজে দায়িত্বরত ছিলেন।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ তার পছন্দের প্রার্থীকে পরীক্ষায় পাশ না করা সত্ত্বেও নিয়োগের জন্য শুরু থেকেই চাপ দিতে থাকেন ও অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামকে গতকাল রাতে নয়টা পর্যন্ত আটকে রেখে তার ওপর নির্যাতন চালান।

এ হামলার ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামকে আটকে রেখে তার ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সমিতি জোর দাবি জানাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App