×

জাতীয়

‘ডাকাতি করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম

‘ডাকাতি করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়’

ফাইল ছবি

অপর আসামি গিয়াসের জবানবন্দি

কক্সবাজারে ডুবন্ত ট্রলারে অর্ধগলিত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার গিয়াস উদ্দিন মুনির (৩২) নামে আরো এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সন্ধ্যায় গিয়াসের জবানবন্দি রেকর্ড করেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন আসিফ।

জবানবন্দিতে গিয়াস বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় তিনি (গিয়াস) জড়িত। তবে, ১০ জনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি চকরিয়ার লবণমাঠে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়েই ডুবন্ত ট্রলারটির ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় মহেশখালী পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও এক জলদস্যুর জড়িত থাকার কথাও তুলে ধরেন গিয়াস উদ্দিন মুনির।

গিয়াস উদ্দিনের জবানবন্দি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন আসিফ রেকর্ড করেছেন নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলায় এ পর্যন্ত ছয় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে সবাইকে পাঁচ ও তিনদিন করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে চারজন (কামাল হোসেন বাইট্যা কামাল, আবু তৈয়ূব, ফজল কাদের ও গিয়াস উদ্দিন) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু জবানবন্দিতে চারজন কী বলেছেন, তা তার জানা নেই। তবে রিমান্ডের সময় জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। কিন্তু তা প্রকাশ করা যাবে না। বর্তমানে ছয় আসামি কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন।

‘রোজার মাসে তাদের (নিহত ব্যক্তিদের) হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই শহীদ হয়েছেন।’

জবানবন্দিতে গিয়াস আরো বলেন, শেষবার তিনি অন্য কয়েকজন জলদস্যুর সঙ্গে সাগরে ডাকাতিতে নামেন রোজার দ্বিতীয় দিন। জলদস্যু সুমনের কথায় ওই সময় মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর (৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়ার বাসিন্দা) খায়ের হোসেনের মায়ের দোয়া ট্রলার নিয়ে সাগরে নামেন। তখন ট্রলারে দেখা হয় মহেশখালীর নুরুল কবির (ডুবন্ত ট্রলারে নিহত), চকরিয়ার কোনাখালীর সাইফুল ইসলামসহ (ডুবন্ত ট্রলারে নিহত) আরও সাত জলদস্যুর সঙ্গে। রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তারা একটি মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট চালান। ট্রলারটিতে মাছ ছিল না। তবে মাছ ধরার জাল, এক ব্যারেল ডিজেল ও পাঁচ-ছয়টি মুঠোফোন লুট করা হয়। পরের রাতে আরেকটি ট্রলার থেকে প্রায় ৬০০টি ইলিশ মাছ, পাঁচ-ছয়টি মুঠোফোন লুট করা হয়।

পরদিন দুপুরে লুটের মালামালসহ মায়ের দোয়া ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে পৌঁছালে কমিশনার খায়ের হোসেন ও জলদস্যু সুমন আরেকটি ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিছুক্ষণ পর লুটের মালামালগুলো ট্রলারে তুলে নিয়ে মহেশখালীর দিকে চলে যান খায়ের ও সুমন। ডাকাতির হিস্যা হিসাবে গিয়াসকে আট হাজার টাকা দেয়া হয়। এই যাত্রায় চকরিয়ার সাইফুলকে ট্রলারে নিয়ে যান গিয়াস উদ্দিন। সাইফুলের জীবনে এটিই ছিলো প্রথম ডাকাতির ঘটনা।

গিয়াস বলেন, ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না। থাকলে তিনিও গণপিটুনিতে মারা যেতেন। ৭ এপ্রিল ট্রলার নিয়ে সাগরে ডাকাতিতে নামার জন্য সুমন ও নুরুল কবির তাকে (গিয়াস) কয়েক দফা ফোন করেছিলেন। কিন্তু লবণমাঠে কাজ থাকায় সে যাত্রায় তিনি যেতে পারেননি। ডাকাতি করতে গিয়ে ১০ জনকে পিটিয়ে হত্যার কথা কানে এলে তিনি (গিয়াস) সুমনকে ফোন করেন। জবাবে সুমন বলেছিলেন, তিনি তাদের (নিহত ব্যক্তিদের) মরতে পাঠাননি, পাঠিয়েছিলেন মালামাল লুটপাট করতে। ‘রোজার মাসে তাদের (নিহত ব্যক্তিদের) হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই শহীদ হয়েছেন।’

এর আগে কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার সময় কক্সবাজার শহরে ছিলেন তিনি। তবে ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের সঙ্গে তার কয়েক দফার কথায় নিশ্চিত হয়েছেন যে ১০ জনের ট্রলারটি সাগরে ডাকাতি করতে নেমেছিল। ডাকাতির একপর্যায়ে কয়েকটি ট্রলারের জেলেরা ১০ জনকে জিম্মি করে প্রথমে গণপিটুনি দেন। এরপর গুম করার জন্য লাশগুলো বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ট্রলারটি (ডুবন্ত ট্রলার) সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

মামলার অপর দুই আসামি (ট্রলারের মাঝি) আবু তৈয়ব ও ফজল কাদের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনাটি তাদের চোখের সামনে ঘটলেও এর সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন না।

গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় চারজন (মহেশখালীর মাতারবাড়ীর বাইট্যা কামাল, করিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি) ও অজ্ঞাতনামা আরো ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন ডুবন্ত ট্রলারের মালিক ও মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিদের চারটি ট্রলারের ৫০-৬০ জন লোক মিলে সামশুলের ট্রলারটি আটকে পরবর্তী সময়ে সামশুলসহ অন্যদের গলায় রশি পেঁচিয়ে, হাত-পা রশি ও জাল দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাছ রাখার হিমাগারের ভেতর আটকে রাখেন এবং ওপর থেকে ঢাকনায় পেরেক মেরে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ট্রলারের তলা ফুটো করে দেন। এতে সেটি ডুবে যায়। সামশুলের সঙ্গে এজাহারে নাম থাকা চার আসামির পূর্বশত্রুতা ছিলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App