×

জাতীয়

সরকারকে চাপে রাখতে ৩ কৌশল বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

সরকারকে চাপে রাখতে ৩ কৌশল বিএনপির

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকামুখী চূড়ান্ত আন্দোলনের চাপ তৃণমূলের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে কঠোর কর্মসূচি
ভোটের আগে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে মাঠ গুছিয়ে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে অল-আউট আন্দোলন কর্মসূচিসহ তিনটি কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। পাশাপাশি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে সরকারের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে জনসমর্থন আদায় ও নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কূটনৈতিক লবিং জোরদার করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখবে। এই তিনটি কৌশলে ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিতের টার্গেট নির্ধারণ করেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট একাধিক শীর্ষনেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপির কৌশলের কাছে ক্ষমতাসীনদের এবার পরাজয় ঘটবেই। বিএনপির নেতাদের দাবি, সরকার যে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে বিএনপিকে চাপে ফেলতে পারবে না। বরং তারা সঙ্কুচিত হবে। ইতিমধ্যে সরকার চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে বলেই বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি-না এ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা কথা বলছেন। কতটা অস্থিরতায় ভুগলে এটা হতে পারে! তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিএনপির সমালোচনা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে হামলা করে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের কর্মকান্ডেই প্রমাণ হচ্ছে তারা প্রচন্ড চাপের মধ্যে আছে। সেজন্য তারা তাদের অনৈতিক ক্ষমতাকে নৈতিকতার মোড়কে আবদ্ধ করতে চায়। সরকারের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে আগামীতে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। সব রাজনৈতিক দলকে আমরা একই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করেছি, যাতে এই সরকারের চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণের শক্তি। এবার বিএনপির পাশাপাশি সরকারের পতন নিশ্চিত করতে জনগণের চাপ তৈরি হচ্ছে। মানুষ সমস্ত বাঁধা ফ্যাসিবাদি আক্রমন অতিক্রম করে ¯্রােতের মতো রাস্তায় নেমে আসছে। আমরা আশাবাদী, এবারের আন্দোলনের চাপে সরকারের পরাজয় হবে। ঢাকামুখী চূড়ান্ত আন্দোলনের চাপ : দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থেকে দল গোছানোসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সরকারবিরোধী এ আন্দোলনে সফল পরিসমাপ্তি বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও হাল ছাড়তে রাজি নয় দলটি। শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবনায় জয়ের বিকল্প নেই। তবে এ আন্দোলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তাদের। যে কোনো মূল্যে বিজয় পেতে প্রস্তুত করা হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক। সেই আন্দোলনে কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত উজ্জ¦ীবিত রাখাই এই মূহর্তে বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। সূত্র জানায়, ঢাকামুখী কর্মসূচির মাধ্যমেই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। লক্ষ্য অর্জনে যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দলটির নেতারা। দাবি আদায়ে বিএনপির ১০ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাকে সমন্বয় করে ৭ দফার যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে। আগামী আগস্ট মাসের আগেই সরকারকে বড় ধরনের একটি ধাক্কা দিতে চায় দলটি। আন্দোলনের জন্য বিএনপি ও সমমনা জোটের নেতারা গতানুগতিক কর্মসূচি না দিয়ে রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছেন। সবশেষে ঢাকামুখী কর্মসূচি, ঢাকা ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি দিতে চায়। এর আগে প্রত্যেক সিটি করপোরেশন এলাকায় সমাবেশ কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে যেতে চলতি মাস থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ওয়ার্মআপ কর্মসূচি থাকবে। প্রথম দফায়- রোডমার্চ, লংমার্চ এবং বৃহত্তর ১৯ জেলায় সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি করতে চায় দলটি। দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজধানী ঢাকামুখী কর্মসূচিতে যেতে চায় তারা। সেক্ষেত্রে বিএনপি গণভবন ও সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির কথা চিন্তা করছে। চলতি মে মাসের মধ্যভাগে সুধীজন, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। পাশাপশি ২৭ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নেয়া হবে নানা কর্মসূচি। এই সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি তফশিলের পরের কর্মসূচি কি হবে তা নিয়েও ভাবছে দলটি। সূত্রের দাবি, নির্বাচন মাফিক দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হলেও রাজপথ ছেড়ে দিতে না হয়। নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে না পড়ে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির আন্দোলনই সরকারকে বিদায় নিতে বাধ্য করবে। ‘নো ওয়ে’। কূটনৈতিক লবিং জোরদার : দলনিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপি শুধু আন্দোলনেই সীমিত থাকবে না। কূটনৈতিক মহলের সমর্থন নিয়ে সরকারকে বাড়তি চাপে রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গ্রাউন্ডওয়ার্ক করছে। সূত্র জানায়, দলটির পক্ষ থেকে বিদেশিদের কাছে আগের নির্বাচনি ইতিহাস, নির্দলীয় সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হবে। কূটনীতিকদের কাছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-নিহতের সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ দেশের পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে। এছাড়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাতে ভারত সফরের মধ্যে দিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে বিভিন্ন দেশে সফর করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করে। গত ২৩ এপ্রিল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের বাসায় নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। সেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মহল থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নিতে বিএনপির চাপ আছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়টিও তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাজপথের আন্দোলনে এবার বিএনপি শক্ত অবস্থান নিতে পারে বলে তারা মনে করছেন। এমন ধারণা নিয়ে ওইসব দেশও বিএনপির প্রতি আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। অতীতে যারা বিএনপিকে এড়িয়ে চলত তাদের অনেকে এখন বিএনপির সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন। দলের শীর্ষ নেতারাও তাদের সঙ্গে দেখা করছেন। নানা বিষয়ে পরামর্শ করছেন বিদেশিদের সঙ্গে। জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরের আন্তর্জাতিক সংগঠন যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, বিএনপির সঙ্গে সবার যোগাযোগ আছে। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আমাদের মত ও যুক্তি তুলে ধরছি। এখানে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে কিছু করা হচ্ছে ব্যাপারটা সেরকম না। দেশে কি ঘটছে এটা জনগণ যেমন দেখছে বিদেশীরাও টের পাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা : নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপে রাখার হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর সরকারের নানা ব্যর্থতা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে জোরালো করতে দলীয় ওয়েবসাইট, অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল, টুইটার ও গুগল অ্যাকাউন্টসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। আগামীতে এ কার্যক্রম আরো জোরালো হবে। এর মধ্যে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি নিরাপদ করা এবং সারাদেশে দল-সমর্থিত অ্যাক্টিভিস্টদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে এবং আন্দোলন ও নির্বাচন মাফিক সব কার্যক্রম সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ও যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে এবং প্রচারণায় নতুন মাত্রা আনতে গত জুনে মিডিয়া সেল গঠন করে বিএনপি। মিডিয়া সেল দেশের প্রচলিত গণমাধ্যম ছাড়াও যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের সক্রিয় অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। এই প্ল্যাটফর্মে সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিষয়কে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য জানতে পারছেন দলের নেতাকর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কোটি কোটি মানুষ। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘ভেরিফায়েড’ করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা ও নির্যাতনের চিত্র ডকুমেন্টরী তৈরী করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির প্ল্যাটফমকেও আন্দোলন ও প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছি। এখানে সরকারের অন্যায় অবিচার, দূনীতির চিত্র যেমন খুব সহজেই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যাচ্ছে। তেমনি বিএনপির নীতি, আদর্শ, উদ্দেশ্য, কর্মকান্ড প্রচার-প্রচারণার কাজে সারা দেশের নেতাকর্মীদের একাত্ম করা সম্ভব হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App