×

সম্পাদকীয়

রাজস্ব আদায়ের বাধা দূর হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ১২:৩৪ এএম

রাজস্ব আদায়ের বাধা দূর হোক

রাজস্ব আয়ে দিন দিন ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারো রাজস্ব ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জিডিপির তুলনায় সবচেয়ে কম রাজস্ব আয় করা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। এটি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। প্রতি অর্থবছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কারণে রাজস্ব খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয় না। ভঙ্গুর অর্থনীতি, কর আদায়ে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কর অব্যাহতি প্রক্রিয়া। সরকারের অভ্যন্তরীণ আয়ের সিংহভাগ জোগান দেয় এনবিআর। জনগণের দেয়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, আয়কর এবং শুল্ক থেকে আসে রাজস্ব। সরকারের এ আয় বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগের কথা বলা হলেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় আয় বাড়ছে না। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো করতে হলে রাজস্ব আয়ের বাধা দূর করতেই হবে। প্রথমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায়। রাজস্ব আদায়ে দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে পুরো অর্থনীতি এক ধরনের বৈষম্যের মধ্যে রয়েছে। কর আদায়ে বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে অনেক সামর্থ্যবান লোক করের বাইরে রয়ে গেছে। বৈষম্য এবং সমস্যা দূর করার কোনো পদক্ষেপ নেই, যা মোটেও কাম্য নয়। তৃতীয়ত, কর অব্যাহতি প্রক্রিয়ায় বড় গলদ রয়েছে। বড় বড় জায়গায় উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু কর মওকুফ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে জিডিপি বাড়লেও কর বাড়ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। সরকারকে এসব জায়গায় নজর দিতে হবে, শৃঙ্খলা আনতে হবে। এনবিআরকে সরকারের কাছে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পলিসি সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কার এবং সংস্কার বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে মনে করি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজস্ব আয় কম হওয়ার অন্যতম কারণ কর ফাঁকি। সংস্থাটির মতে, ফাঁকি ও কর এড়ানোর ফলে এক বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয় বলে এক গবেষণায় পাওয়া গেছে। কর ফাঁকি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষের ভোগব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই প্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভ্যাট আদায়ে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও ২০১১ সালের পর রাজস্ব প্রশাসনে আর তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে কাক্সিক্ষত সংস্কার বিলম্বিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথ গতির। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। রাজস্ব আয় বাড়ানো এর শর্ত। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয় সমাধানে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। সর্বোপরি রাজস্ব আদায়ে বাধা দূর করা, কর সংগ্রহের গতি আনা, সব জেলা ও উপজেলায় রাজস্ব অফিস স্থাপন এবং কর জরিপ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App