×

সাহিত্য

মুক্তি রাণী হত্যার বিচার দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম

মুক্তি রাণী হত্যার বিচার দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ

ছবি: ভোরের কাগজ

মুক্তি রাণী হত্যার বিচার দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ
মুক্তি রাণী হত্যার বিচার দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ

নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রাণী বর্মণকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা মুক্তি রাণী বর্মনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান এবং হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করেন। এরকম ঘটনায় রাষ্ট্রকে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বানের পাশাপাশি এরকম ঘটনারোধে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করা ও যেগুলোতে এই সেল আছে সেই সেলগুলো কার্যকর করার দাবি জানান। এছাড়াও বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন বক্তারা।

এসময় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান, নারী প্রগতি সংঘ ঢাকা পূর্বের সংগঠক সেলিনা পারভীন, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, প্রীতিলতা বিগ্রেডের সমন্বয়ক সুমাইয়া সেতু, সিপিবির নারী সেলের সদস্য লুনা নুর, উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে ও সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান প্রমুখ।

এর আগে একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানবন্ধন করেন প্রীতিলতা বিগ্রেডের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, শুধু মুক্তি রাণীর এই ঘটনা নয়, এর আগেও নারী নির্যাতন ও নৃশংসতার ঘটনা আমরা দেখেছি। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা দেখেছি। যাদের অন্যায়ের কাছে অনেক কিছুই অসহায় হয়ে পড়ে। এরকম ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এসবের বিরুদ্ধে।

তিনি আরো বলেন, টাকা ও মাদকের ক্ষমতার কাছে সব কিছু মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার কথা আমরা বলি সেটা হাস্যকর হয়ে উঠছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হাস্যকর হয়ে উঠতে দেয়া যাবেনা। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমর্থন করি তারা যদি এই চেতনাকে সমুন্নত করতে পারি তবে বাংলাদেশকে উন্নত একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। নাহলে পৃথিবীর আর পাঁচটা দেশের মতো বাংলাদেশ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছায়ার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। আর যেখানে অপরাধ একটি বিশেষ সূচক হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি আরো যোগ করেন, একজন মা হিসেবে ওই ছেলেরই বা আমি কী বিচার চাইবো। এটি সত্যিই খুব খারাপ লাগার বিষয়। এই রকম নৃশংস বিষয়গুলোকে যদি সকলে মিলে প্রতিরোধ করা না যায় তবে কোনো নারীই নিরাপদ হবে না। নারী বিদ্বেষ সমাজ থেকে দূর করতে এসময় সকলের অংশগ্রহণ কামনা করেন তিনি।

এসময় প্রীতিলতা ব্রিগেডের সমন্বয়ক সুমাইয়া সেতু বলেন, জন্মগতভাবে ওই ছেলে কখনোই ঘাতক হয়ে জন্মায়নি। চলমান এই সমাজ তাকে ঘাতক বানিয়েছে৷ কেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে এই কারণগুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে এখন।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান এমন একটি সময় এসেছে যেখানে দেশের সর্বত্র নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধু মুক্তি রাণী নয়, গোটা দেশেই মেয়েরা নিরাপদ নয়। প্রত্যেক এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে যারা অন্যতের হয়রানী করছে। কিছুদিন ধরেই আমরা এসব বেশি শুনছি। কিশোর গ্যাং গড়ে উঠার পেছনের কারণগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে 'মানুষ' হিসেবে গড়ে উঠার বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন,আজকে এমন একটি বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যখন একটি মেয়ের ( মুক্তি রাণী) ছবি দেখলাম, জানলাম, মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে তখন কোনকিছু লেখার বা বলার মত অবস্থায় আমি ছিলাম না। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম, কোথায় আছি আমরা, কী করছি আমরা, আমাদের কাজ কী, এটাই কী আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ? প্রশ্ন রাখেন অধ্যাপক বদিউর রহমান।

বদিউর রহমান আরো বলেন,' আসুন আমরা ওয়াদাবদ্ধ হই, এই সমাজব্যবস্থা, এই হত্যাকান্ড এবং এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সংবিধানে উল্লেখ থাকা চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে পদে পদে আমাদের আঘাত পেতে হবে, মরতে হবে। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলে অপসংস্কৃতিকে সমূলে উৎপাটন করার আহ্বান জানান অধ্যাপক বদিউর।

প্রসঙ্গত, নিহত মুক্তি রাণী উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুর গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। সে ছালিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও বারহাট্টা নারী প্রগতি সংঘের ইয়্যুথ গ্রুপের সদস্য ছিল। আর ঘাতক কাউসার মিয়া একই গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেছেন নিহত মুক্তি রাণী বর্মণের বাবা।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে প্রেমনগর গ্রামের ধানক্ষেতসংলগ্ন জঙ্গল থেকে ঘাতক কাউসারকে (১৮) আটক করে পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মুক্তি রাণীর পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাথায় ও ঘাড়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে কাউসার। মূলত দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার পরেও রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আঘাত করেছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

এর পরে সহপাঠী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুক্তি রাণীকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুক্তি রাণীর মরদেহ প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় বাড়িতে। পরে বাড়ির পাশে কংস নদীর তীরে তাকে দাহ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App