×

সাহিত্য

তিনদিনের রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ০৯:১২ পিএম

তিনদিনের রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শুরু

ছবি: ভোরের কাগজ

তিনদিনের রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শুরু
তিনদিনের রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শুরু
তিনদিনের রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শুরু

রবীন্দ্রনাথ হচ্ছে দিক নির্দেশক

বৈশাখী ফুলের সুবাস ছড়ানো বিকেলে শিল্পকলা মুখর হয়ে ওঠে বাদ্যযন্ত্রের সুরেলা শব্দধ্বনিতে। সেই সুরের মোহজালকে সঙ্গী করে সচল হয়ে ওঠে তিন স্তরে বসে থাকা শিল্পীদের সুরধ্বণি। সম্মিলিত কোরাসে সকলে মিলে গেয়ে শোনান তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে/এসো গন্ধ বরণে এসো গানে। এভাবেই বোধন সঙ্গীতের মাধ্যমে নবপ্রাণের স্পন্দনে তিনদিনব্যাপী ৪১তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের সূচনা হলো বৃহস্পতিবার (৪ মে)।

প্রথম দিনের আয়োজনে মুগ্ধতা ছড়ালো খ্যাতিমান থেকে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনা। সেই রবীন্দ্র সৃষ্টির নির্যাসে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের প্রাণ ছুঁয়ে দিল এক পশলা বৃষ্টির মতো। গানের সঙ্গে ছিলো বৈচিত্র্যময় নৃত্য পরিবেশনা। সঙ্গে ছিল পাঠ ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। ছিল বিশিষ্টজনদের কথন। সেই কথনে চলমান বৈশ্বিক সংকট রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নির্যাসে নতুন পথে দিশার খোঁজার আহ্বান এলো। কবিগুরুর প্রদর্শিত পথে কল্যাণময় বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত হলো।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত এই সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সারা দেশের ৭২টি শাখার পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক। তিন দিনের সন্ধ্যার অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও সঙ্গীতের সম্মিলনে।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভাপতির বক্তব্য রাখেন সম্মেলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান।

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/এ জীবন পুণ্য করো দহন দানে,এই গানের সমান্তরালে নৃত্য পরিবেশনার মাঝে প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এসময় নৃত্যশিল্পীদের হাতে থাকা প্রদীপগুলো নাচের তালে ছড়িয়ে দেয়া হয় মঞ্চজুড়ে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছে দিক নির্দেশক। তাই তার সৃষ্টির আলোকে তাকে অনুসরণ করলে সমৃদ্ধ হবে জীবন। রবীন্দ্রনাথ ছড়িয়ে আছেন আমাদের জীবনের সর্বস্তরে। কবিগুরু হলেন শিল্পের কবি, সাহিত্যের কবি ও মননের কবি। এ কারণেই নোবেলজয়ী আরব সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ হলেন সারা বিশ্বের অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, এখনকার গান-বাজনায় উপভোগ করতে কান লাগে না, চোখ দিয়ে দেখতে হয়। কারণ গানের নামে শিল্পী চিৎকার করছে ও লাফাচ্ছে। সেটা শ্রোতার মনে দাগ কাটছে না। সেই বাস্তবতায় সঙ্গীত আমাদের জীবনকে নতুন পথ দেখিয়েছে। কথা বলতেও আমরা সুরের ব্যবহার করি। রবীন্দ্রনাথ এই কথা বলার ভঙ্গীকেই তার গানে রূপ দিয়েছেন। প্রকৃতির ছন্দকে গানে মেলে ধরেছেন তিনি। তাই তো, রবীন্দ্রনাথ বিশেষ কবি, চারদিকের কবি ও শিল্পকলার কবি।

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবারের সম্মিলনটি রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য নওগাঁর পঁতিসরে হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই তিন দিন আমরা শুধু গান শুনে কাটাবেন না। রবীন্দ্রচর্চার শপথ নেবো। কারণ আমরা উপলব্ধি করছি এ কালে চলতি পথে পদে পদে অনেক সম্ভাবনা, সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সংকট। সেই সংকটে পথের দিশারী হবেন রবীন্দ্রনাথ। আর জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ শুধু গানের চর্চা করে না। মননের পরিবর্তনের চেষ্টা করে। সময়টা এখন খুব চ্যালেঞ্জিং। অর্থনীতি ও সমাজ একেবারেই টালমাটাল। শীতল যুদ্ধের চেষ্টা চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে কবিগুরুর লেখা থেকে মানবিক সমাজ বিনির্মাণের পথ খুঁজতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের খুব ইচ্ছে ছিল কবিগুরুর প্রিয় ভূমি পতিসরের কাছাকাছি কোথাও সম্মেলনটি করব। কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে পারিনি। রবীন্দ্রনাথ এ দেশে জমিদারির কাজে এলেও তার অভিজ্ঞতার আলোকে পূর্ববঙ্গকে দিয়েছেন সমৃদ্ধ শিল্পসম্ভার। তিনি এমন কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে গিয়েছেন যে আজো তার ফল ভোগ করছি। চেন্নাই থেকে যে গাভী এনেছিলেন তার কারণে আজ ও ওই অঞ্চলে দুধে সমৃদ্ধ।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা একাডেমি ফর মনিপুরী আর্টস এ্যান্ড কালচারের শিল্পীরা পরিবেশন করেন একটি মনিপুরী নৃত্য। সেই নাচে ঢোলের বাদলের তালে শিল্পীর শরীর শূণ্যে। এরপর পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার পরিবেশনায় ‘আন অমৃতবাণী’ শীর্ষক গীতিআলেখ্য পরিবেশিত হয়। মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দার সঙ্গীত পরিচালনা ও তাথৈর নৃত্য পরিচালনায় গীতিআলেখ্যটি পরিবেশিত হয়। এদিনের আয়োজনে আবৃত্তি পরিবেশন করেন জহিরুল হক। নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও সান্তনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, লিলি ইসলাম, ছায়া কর্মকার, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপি, মিলন ভট্টাচার্য, সুতপা সাহা, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, শ্রেয়সী রায়, দিবাকর বিশ্বাস, অমিতা দেবনাথ, অভয়া দত্ত, শিবেশ কির্তনীয়া, দীপ্র নিশান্ত, মো. মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, উর্মি রায় বণ্যা, তাসমিনা ওপেল ও লোপা আহমেদ।

শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতি সম্মেলন। বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে ‘নদীতীরের প্রেমের গান’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করবেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তৃতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা ৩৫ মিনিটে রবিরশ্মির সুবচনে অংশ নেবেন সংস্কৃতিজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। এদিন সাড়ে আটটায় পরিবেশিত হবে লাইসা আহমদ লিসার সংগীত ও শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের নৃত্য পরিচালনায় গীতি-আলেখ্য ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। এদিন রবীন্দ্র পদক দেয়া হবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও শিক্ষাবিদ সংগীতজ্ঞ অধ্যাপক আ ব ম নুরুল আনোয়ারকে। শেষ দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষাবিদ অনুপম সেন। এদিন সমাপনী বক্তব্য দেবেন পরিষদ সভাপতি সনজীদা খাতুন। এছাড়া আয়োজনের শেষ দিন থাকবে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলনের পরিবেশনায় নৃত্যালেখ্য বিদায় অভিশাপ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App