×

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণে আবার শীর্ষে ঢাকা : অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১২:২০ এএম

বায়ুদূষণে আবার শীর্ষে ঢাকা : অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

বিশ্বজুড়ে দূষিত শহরের তালিকায় আবার প্রথম স্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। বিশ্বজুড়ে দূষিত শহরের তালিকায় এর আগেও ঢাকা বারবার শীর্ষে উঠে এসেছে। ঈদের ছুটির পর রাজধানীতে ফিরেছে মানুষ। বায়ুমানের পরিস্থিতি আবার খারাপ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের। রাজধানীতে বসবাসকারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা একিউআই এয়ারের দেয়া তথ্যমতে, গতকাল সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ১৭৫। অস্বাস্থ্যকর শহরের তালিকায় ঢাকার পরই ছিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ১৭৩। এরপরের স্থানগুলোতে ছিল মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, পাকিস্তানের লাহোর, আরব আমিরাতের দুবাই, চীনের উহান এবং বেইজিং। ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমাণ ১০ শতাংশ করে বাড়ছে প্রতি বছর। আর শীতকালে তা ১৬ গুণ বেশি দূষিত হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে ৩১৭ দিনই খারাপ থাকে রাজধানীর বাতাস। এই পরিসংখ্যান আমাদের শঙ্কিত করে। দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় কেন বারবার শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা- এই প্রশ্নে প্রতি বছরই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিকারের জন্য সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে। পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, তবে প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হচ্ছে। যানবাহনে ব্যবহƒত জ্বালানি থেকে নির্গত কার্বন দূষণের অন্যতম কারণ। শিল্প কারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে মারা যাচ্ছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। গবেষকদের মতে, দূষণের মাত্রা কমানো গেলে বাংলাদেশের মানুষ আরো ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকাবাসীর গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। দূষিত বায়ুর কারণে এখানকার জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেবল স্বাস্থ্য নয়, জিডিপির ক্ষতিও হচ্ছে ৩.৯-৪.৪ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় একিউআই ইনডেক্সের ভয়াবহ মাত্রা ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জনস্বার্থে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করি। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। বায়ুদূষণ রোধে ২০২০ সালে ৯ দফা নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি/বালু/বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; নির্মাণাধীন এলাকায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটানো; রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা; দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো রয়েছে। যদিও বাস্তবে দেখা যায়, ওই নির্দেশনার দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগই মানা হয় না। আমরা এই সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কার্যক্রম প্রত্যাশা করি। সংশ্লিষ্টদের আদালতের নির্দেশনা আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সুস্থ থাকতে ও বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হলে বায়ুদূষণ কমানোর বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App