×

সাহিত্য

‘তরুণরাই আগামীর গতিপথ নির্ধারণ করবে’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম

‘তরুণরাই আগামীর গতিপথ নির্ধারণ করবে’

বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

তরুণদের নিয়ে আমি আশাবাদী। বাংলাদেশের আগামীর গতিপথ নির্ধারণে তারাই কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, শিল্প প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আগামীর পৃথিবী তারা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা কেবল তারাই ঠিক করবে।

বুধবার (৩ মে) বিকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শহীদসন্তান নুজহাত চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, লেখক-সাংবাদিক সুশীল মালাকার প্রমুখ।

‘জাহানারা ইমামের আন্দোলন: তরুণদের করণীয়’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূল। সঞ্চালনা করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেল এর সভাপতি আসিফ মুনীর।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আরও অনেকের মতো আমিও মনে করতাম এ দেশের তরুণরা প্রতিবাদ করতে পারে না। তবে গণজাগরণ মঞ্চের সময় দেখলাম তারা দলে দলে পথে নেমে এসেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ছেড়ে। তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই থেকে আমি তরুণদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। কোনো ভয় নেই, কারণ তারা রেডি আছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে থেকে তরুণরা তাদের জগতকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, কীভাবে দেশকে সে জায়গায় পৌঁছে দেবে, সেই কৌশল তারাই ঠিক করবে। তারা প্রয়োজনে আমাদের ডেকে নেবে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখন শারীরিক নিরাপত্তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা। কেউ যদি মানহানির মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে অপদস্থ করে তবে সেই দোষ কি আইনের?

মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের যে কারিগরি সক্ষমতা রয়েছে তাতে আমরা ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের নির্দিষ্ট কোনো কনটেন্ট বন্ধ করতে পারি না। ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার কথা ওঠে। তবে আমাদের দেশের তিন লাখ ছেলেমেয়ের আয়ের সরাসরি উৎস ফেসবুক। ইচ্ছে করলেই কি আমরা সে ঘরে তালা মেরে দিতে পারি?

তিনি বলেন, দেশে এখন সাংস্কৃতিক সংকট বিরাজ করছে। সংস্কৃতিচর্চার সবটা কেবল উদীচীর কাঁধে চাপিয়ে দিলে চলবে না। সংস্কৃতির শক্তিই তো বাঙালির পরিচয়। সেখানে আরও কাজ করতে হবে। কারণ তরুণরাই যুদ্ধ সংগ্রাম করে একাত্তরে জয়ী হয়েছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, আজকে দেশের অনেক মানুষের মনোজগতে সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নাগরিকদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জাহানারা ইমামের আন্দোলন আমাদের সেই পথ দেখায়।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে একাত্তরে বেশিরভাগ তরুণই শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অথচ মোল্লাদের আপত্তির কারণে গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দেয়া হলো, তাদের তোয়াজ করে কী লাভ? জামায়াত নেতা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, তার বিরুদ্ধে মানহানী মামলা করা উচিত। কিন্তু রাষ্ট্রিয় পরিসরে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ দেখতে পাচ্ছি না।

শাহরিয়ার কবির বলেন, রাজনীতির উপর ধর্মের আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশ মোল্লা ওমরের রাষ্ট্র হবে এবং মৌলবাদের সঙ্গে আপস করে যারা টিকে চেয়েছে তারাই হেরেছে।

পার্লামেন্টে আমরা বঙ্গবন্ধুর কোনো ঘাতককে দেখতে চাই না বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।

নুজহাত চৌধুরী বলেন, পচাত্তরের পর উল্টো পথে হাটা বাংলাদেশে তরুণদের উপরই ভরসা করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। এখন তাদের সামনে প্রলোভণের শেষ নেই, তবু কাদামাটির মতো তরুণেরা বয়োজ্যেষ্টদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

নাদিয়া চৌধুরী বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম শুধু একাত্তরের শহীদের জননী বা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা বা রুমির মা ছিলেন না, তিনি একজন নারীবাদী, লেখক, শিক্ষাবিদ এবং সর্বোপরি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

২০১৩ সালে যখন গণজাগরণ মঞ্চের সূচনা হয় তখন আমি লন্ডনে ছিলাম। আমি আমার পরিবারের ১৯৭১ সালের গল্প শুনে বড় হয়েছি, তারপর হঠাৎ যখন লন্ডনে বসে জাহানারা ইমামের পোস্টারে আলোকিত শাহবাগের দৃশ্যে বাংলাদেশের তরুণদের দেখলাম, তখনি বুঝতে পেরেছিলাম একাত্তরের চেতনার অব্যাহত সংগ্রামে অবদান রাখার এটাই আমার সুযোগ।

নাদিয়া বলেন, গণআদালতের মাধ্যমে জাহানারা ইমাম যে পথ দেখিয়েছিলেন, তা আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে ২০১৩ সালে তরুণদের নেতৃত্বে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে।

মারুফ রসূল বলেন, মাথা উচু করে শ্রদ্ধা জানানোর মন্ত্র আমরা শহীদ জননীর কাছেই শিখেছি। না হলে আমরা তো বেড়ে উঠেছিলাম এক কানাগলির দুঃসময়ে। জন্ম নিয়েছিলাম এমন এক দশকে যখন উতিহাস বিকৃতির কুৎসিত উৎসব চলছে দেশময়। জন্মের পরই আমরা জেনেছিলাম ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধের নয়, বরং গণ্ডগোলের বছর ছিল।

সুশীল মালাকার বলেন, শহীদ জননীর যে স্পিরিট তা-ই নিয়ে আমাদের জনযুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু আদর্শের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।

সকালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App