লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আব্দুল্যাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম খুনের ঘটনায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে রামগঞ্জের আলোচিত দেওয়ান ফয়সালসহ আরো ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

সোমবার (১ মে) দুপুরে র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-৩, নোয়াখালী কার্যালয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার ও লে. কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্যাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম হতাকাণ্ডের পর কিলিং মিশনে অংশ নেয়া খুনিরা ঘটনাস্থল ছাড়ার সময় স্থানীয় সিসিটিভিতে ধারণকৃত ফুটেজে যাদেরকে দেখা গেছে। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে শনাক্ত করার পর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে গ্রেপ্তারে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব। এর অংশ হিসেবে রবিবার র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মামলার এজাহার নামীয় ২নং, ৩নং ও ১১নং আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন রশিদপুর পাটোয়ারী বাড়ির সুজায়েত উল্যাহর ছেলে মশিউর রহমান নিশান (৪৫), রামগঞ্জের পূর্ব কাজিরখিল পৌর ৬নং ওয়ার্ডের এটিএম ছালেহর ছেলে দেওয়ান ফয়সাল (৩৮), বশিকপুরের পোদ্দার বাজার শেরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে নাজমুল হোসেন (৩৮) ও পশ্চিম শেরপুর গ্রামের দেওয়ান বাড়ির হুমায়ুন দেওয়ানের ছেলে রুবেল হোসেন (৩০)। এর মধ্যে রুবেল হোসেনকে ঘটনার পর পৃথক অভিযানে আগেই গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বাকিদের ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

[caption id="attachment_426763" align="alignnone" width="1599"] ছবি: আলী হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)[/caption]

এদিকে, পুলিশের পৃথক অভিযানে রোববার আরমান হোসেন নামে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে জোড়াখুনের ঘটনায় সর্বমোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে দেওয়ান ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আরমান হোসেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য বলে জানা গেছে। র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার ও লে. কমান্ডার মাহমুদুল হাসান আরো জানান, মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। বিগত ২০২১ সালে বশিকপুর ইউপি নির্বাচনে এই মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদী নিহত নোমানের বড়ভাই মাহফুজুর রহমানের কাছে চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

তিনি আরো বলেন, মূলত নোমানের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই তার বড়ভাই মাহফুজুর রহমান নির্বাচনে জয়লাভ করেন। উক্ত নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আবুল কাশেম জিহাদী মাহফুজুর রহমান ও তার ছোটভাই নোমানের উপর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে আবুল কাশেম জিহাদীর মদদে কতিপয় সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুল্যাহ আল নোমানকে হত্যা করে। এ সময় নোমানের সাথে থাকায় রাকিব ইমামও খুনের শিকার হন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা নোমানকে মৃত বলে ঘোষণা করে ও গুলিবিদ্ধ রাকিবকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় প্রেরণ করে। পরে ঢাকায় নেয়ার পথে রাকিবও মারা যায়। এ ঘটনার ২৭ ঘন্টা পর গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত নোমানের বড়ভাই ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে এজাহার নামীয় ১৮ জন এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ জনসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়।