×

সম্পাদকীয়

উচ্ছেদকৃত হরিজনদের পুনর্বাসন জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৪ এএম

রাজধানীর গোপীবাগে রেলওয়ে কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারকে পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে একশর বেশি হরিজন পরিবারের বসতবাড়ি। এরপর থেকে তারা নিরুপায় হয়ে বাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। হরিজন বলে কেউ ঘর ভাড়াও দিচ্ছে না। ঘরবাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ করে দেয়ায় ইট-সুরকির মধ্যে তাঁবু টাঙিয়ে কিংবা শাড়ি বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। হরিজনদের দাবি, কোনো নোটিস ছাড়াই গত ২২ জানুয়ারি উচ্ছেদ করা হয় তাদের, যা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা ভেঙে ফেলা বস্তি পরিদর্শনে যান গত শুক্রবার। তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। আমরাও চাই অবিলম্বে তাদের পুনর্বাসন হোক। বর্তমান সরকার দেশে ভূমিহীনদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে আশ্রয়ণ ও গৃহায়ণ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং করছে। অনেক ভূমিহীন মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন মানবিক উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী হরিজন সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনেও নজর দেবেন বলে আমরা আশা করি। প্রায় দুশো বছর আগে ১৮৩৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ, তেলেগুসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জাত মেথর হিসেবে বাংলাদেশে আনা হয়। সেই থেকে তারা বংশপরম্পরায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে আসছে। জানা গেছে, কলোনিতে প্রায় ২৫০টি পরিবার রয়েছে। রেলওয়ের অধীনে কর্মরত হরিজন সম্প্রদায়ের বাস ছিল ফুলবাড়িয়া পুরনো রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। ৪২ বছর আগে সেখান থেকে তাদের টিটিপাড়া রেলওয়ে হরিজন কলোনিতে স্থানান্তর করা হয়। এখানেও তাদের বসবাস ছিল মানবেতর। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। তার ওপর পুনর্বাসন না করেই উচ্ছেদ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়া এসব হরিজন পরিবারের ভোগান্তি আমাদের ব্যথিত করে। সম্প্রতি পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্পের আওতায় কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন এবং আন্ডারপাস, ওভারপাস, ডিপো ইত্যাদি নির্মাণকাজের জন্য টিটিপাড়া রেলওয়ে হরিজন ও তেলেগু সুইপার কলোনির বাসিন্দাদের দফায় দফায় উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৯ সালে প্রথম দফায় ১১২টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। পরে আরো ২৭ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ করা ১৩৯টি পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে বাকি অন্যান্য পরিবারের ঘরগুলোতে গাদাগাদি করে থাকে। সম্প্রতি আরো ৪০ পরিবারকে যে কোনো সময় উচ্ছেদ করা হবে বলে মৌখিকভাবে তাদের জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নেয়া দুঃখজনক। পুনর্বাসনে গড়িমসি কেন হচ্ছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা জরুরি। নগরের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সফল হবে না। নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে যারা কাজ করেন, তাদের এমন ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে উচ্ছেদকৃত হরিজন ও তেলেগু সুইপার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App