×

সারাদেশ

রাজশাহী সিটি নির্বাচন: লাঙ্গল-হাতপাখা ভোটে থাকলেও নির্ভার নৌকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৯ পিএম

রাজশাহী সিটি নির্বাচন: লাঙ্গল-হাতপাখা ভোটে থাকলেও নির্ভার নৌকা

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অংশ নেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন দলীয়ভাবে প্রার্থীতা ঘোষণা করলেও জাতীয় পার্টি এখনো কারো নাম প্রকাশ করেনি। তবে এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ‘মাথা ব্যথা’ নেই বিএনপির। বিশ্লেষকদের মতে, রাজশাহীতে বিএনপির রয়েছে শক্তিশালী ভোটব্যাংক। দলটির নেতাকর্মীরাও সুসংগঠিত। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় নির্ভার নৌকার প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাসিক নির্বাচনের জন্য আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের পর যাচাই-বাছাই করা হবে ২৫ মে। যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী যদি মনে করেন, তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বাছাইয়ে সুবিচার পাননি; তাহলে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন। রাজশাহীর জন্য বিভাগীয় কমিশনারকে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২৮ মে। এ আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ৩১ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১ জুনের মধ্যে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে এ সিটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে ২১ জুন।

সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিকের বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগামী সোমবার থেকে মাঠে নামবেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছে তিন নাম। তারা হলেন- দলটির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন, সদস্য সচিব ওয়াসিউর রহমান দোলন ও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সোলাইমান বিপ্লব। এদের মধ্যে মনোনয়নের দৌড়ে সাইফুল ইসলাম স্বপন এগিয়ে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী করা হয়েছে দলটির মহানগর কমিটির সহসভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকীকে। নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার বিষয়টিও প্রায় নিশ্চিত।

মনোনয়ন পেয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিকের বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গণসংযোগের পাশাপাশি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। তাকে আবারো জয়ী করতে সাবেক ছাত্রনেতারা মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মোড়ে-মোড়ে গণসংযোগ করে রাসিক মেয়রের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও বসে নেই। কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য দলীয় সমর্থন পেতে তারা ধরনা দিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের কাছে- শুরু হয়েছে লবিং। রাজনীতিবিদরা বলছেন, এটা নির্বাচনী আমেজ। ভোটের মৌসুমে এমনটা হয়েই থাকে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন না হলেও মেয়র পদে ফের বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জয় হবে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা চাই বিএনপি ভোটে আসুক, তারা এলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। না হলে ভোটটা তো একতরফা হবে। হয়তো কেউ কেউ অংশ নেবে, সেটা অংশ নেয়ার জন্য নেয়া।

তিনি বলেন, আমরা মাঠে কাজ শুরু করেছি। আমাদের লড়াইটা অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে। আল্লাহ সহায় হলে নৌকার বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও বলেছেন, আমি ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। খেলেই গোল দিতে চাই। এজন্য জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আমি চাই, বিএনপিও নির্বাচনে আসুক। জনগণের কাছে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিক তারা।

তবে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছে বিএনপি। রাসিক নির্বাচনে দলের পদধারী কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ভোটে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না- এটাই চূড়ান্ত। তবে আমাদের দলের পদধারী কেউ ভোটে অংশ নিলে তাকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শুধু মেয়র পদে নয়, কাউন্সিলর পদেও আমাদের কেউ নির্বাচন করতে পারবে না।

আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক রাজশাহী সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারই যেখানে অবৈধ, সেখানে তাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণ তাদের নির্বাচিত করবে। এ ব্যাপারে দলটির রাজশাহী মহানগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মিন্টু ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। মেয়রপ্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম তালিকায় রয়েছে। মে দিবসে কেন্দ্র থেকে নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা হবে। এরপরই মাঠে আমাদের কাজ শুরু হবে। জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী ভোরের কাগজকে জানান, মে দিবসে নগরীতে তাদের কর্মসূচি রয়েছে। ওই কর্মসূচি থেকেই দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। মুরশিদ আলম বলেন, রাসিক নির্বাচনে আমাদের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী থাকছে না। সুতরাং মেয়র পদেই আমাদের বিশেষ মনোযোগ। আমরা আশাবাদী, এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App