×

সম্পাদকীয়

পলিটেকনিকে বেতনবঞ্চিত ৭৭৭ শিক্ষক : ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৩২ এএম

কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মানোন্নয়ন ও শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭৭৭ জন শিক্ষক ৩৪ মাস ধরে বেতন না পেয়েও ক্লাস করছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে এই শিক্ষকদের দীর্ঘ সময় ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এতে এই শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও পারিবারিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ মাস ধরে এই শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন বন্ধ থাকায় টাকার অভাবে অনেকে সঠিক সময়ে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। এমন বাস্তবতায় অনেক শিক্ষক মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের এমন কষ্ট আমাদের ব্যথিত করে। আমরা এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান প্রত্যাশা করি। জানা গেছে, সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মানোন্নয়ন ও শিক্ষকস্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং ধারাবাহিকভাবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প চলমান থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৭৭৭ জন। ১১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পদায়ন দেয়া হয়। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প শেষে শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২২ মে অনুমোদন করেন। এই আলোকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পে নিয়োজিত শিক্ষকদের সাময়িকভাবে বহাল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে পলিটেকনিকগুলোর সব কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করে আসছেন এই ৭৭৭ জন শিক্ষক। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের থোক বরাদ্দ খাত থেকে ৭৮৬ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে টানা ১৩ দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন ওই শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মৌখিক আশ্বাসে তারা অনশন প্রত্যাহার করেন। এরপর আরো এক বছর দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে শিক্ষকদের মনে চরম হতাশা বিরাজ করছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে আমরা দ্রুত এর সমাধান হবে বলে আশা করি। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দুর্ভোগ নিরসনের আবেদন জানান শিক্ষকরা। দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান এবং চাকরি রাজস্ব খাতে আত্তীকরণের দাবিতে আগামী ৩০ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষকদের এই ভোগান্তি নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করি। অবিলম্বে সরকারি পলিটেকনিকের বেতন-বঞ্চিত শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানসহ চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App