×

সারাদেশ

জাহাঙ্গীরের নামে আটটি মামলা, আজমতের একটিও নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২৫ পিএম

জাহাঙ্গীরের নামে আটটি মামলা, আজমতের একটিও নেই

ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসা হারিয়ে আয় কমেছে জাহাঙ্গীরের, আজমতের আয় এখন বেশি জাহাঙ্গীরের দুটি গাড়ি ও দুটি বাড়ি, আজমতের গাড়ি নেই, বাড়ি নির্মানাধীন বই বিক্রি হতে আজমতের আয় বছরে ১ লাখ
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র ও এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের আয় তলানিতে নেমেছে। ব্যবসা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। পাঁচ বছর আগের চেয়ে কমে গেছে নগদ টাকা। আগামী ২৫ মে এর ভোটে অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার তারা যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, সেটির সঙ্গে আয় ও সম্পদের ঘোষণাসহ যে হলফনামা জমা দিয়েছেন- তাতে সম্পদের এসব তথ্য উল্লেখ আছে। এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লা খান বরাবর আয় ও সম্পদের দিক দিয়ে জাহাঙ্গীরের থেকে পিছিয়ে আছেন বলে সাধারণের ধারণা থাকলেও এবার তিনি জাহাঙ্গীরের তুলনায় বছরে তিন গুণেরও বেশি আয় দেখিয়েছেন। তবে স্থাবর সম্পদ অর্থাৎ জমি ও দালান কোঠার দিক দিয়ে জাহাঙ্গীর এখনও অনেকটাই এগিয়ে। আবার জাহাঙ্গীরের নামে আটটি মামলা থাকলেও আজমতের নামে একটিও নেই। হলফনামা অনুযায়ী, আজমতের নিজের গাড়ি নেই, নির্মাণাধীন একটি বাড়ি আছে। অপরদিকে জাহাঙ্গীরের দুটি গাড়ি ও দুটি বাড়ি। তবে হাতে নগদ টাকা আজমতের বেশি। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় হলফনামায় জাহাঙ্গীর মোট জমি দেখিয়েছিলেন ১ হাজার ৪১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে অকৃষি জমি ছিল ৩৩ দশমিক ৭১২৫ শতাংশ। বাকি সব ছিল কৃষি জমি। এবারের হলফনামায় মোট জমির কথা উল্লেখ নেই। শুধু অকৃষি জমির কথা বলা আছে। সেটি দাঁড়িয়েছে ৮১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। দালান বা আবাসিক সম্পদ আগে ছিল ৭ দশমিক ৪৩৭ শতাংশ। এবার তা দেখানো হয়েছে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবারের হলফনামায় জাহাঙ্গীর হাতে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৪০ লাখ। পাঁচ বছর আগে তা ছিল ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। তিনি ব্যাংকে জমা দেখিয়েছেনে ৫০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন দুটি কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগ দেখিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম এপারেলসে ২০ লাখ টাকার শেয়ার আছে তার। ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, অর্থাৎ এবারের বিনিয়োগের তুলনায় লাখ দশেক বেশি ছিল তার। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ২০১৮ সালের মতো এবারও দেখানো হয়েছ ১০ লাখ টাকা। তার দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র পাঁচ বছর আগের মতো একই পরিমাণে রয়ে গেছে। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে কৃষিখাত থেকে জাহাঙ্গীরের বার্ষিক আয় ছিল দেড় লাখ টাকা। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগেও ছিল চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও তাই দেখিয়েছেন তিনি। তবে কৃষিতে বাড়লেও সামগ্রিকভাবে আয় কমে গেছে জাহাঙ্গীরের। পাঁচ বছর আগে ব্যবসা থেকে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার দেখিয়েছেন মাত্র তিন লাখ। সব মিলিয়ে এবার তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে এটি ছিল দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। গাজীপুরে বেশির ভাগের সাধারণ আলোচনায় আজমত উল্লা খানের তুলনায় জাহাঙ্গীর আলমকে বেশি সম্পদশালী হিসেবে ধরা হয়। তবে হলফ নামায় তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। তার আয় জাহাঙ্গীরের তুলনায় তিনগুনেরও বেশি। আইন পেশা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আজমত বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানতের মুনাফা থেকে আসে আরও ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে সম্মানি ভাতা আসে ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। তার লেখা দুটি বই ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, রাজনীতির মহাকবি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ২০২২ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ, আর্দশ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত’ থেকে বছরে এক লাখ টাকা আসে বলেও জানিয়েছেন আজমত। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বছরে আয় হয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা, যা জাহাঙ্গীরের দেখানো আয়ের তিন গুণেরও বেশি। তবে আজমত হাতে থাকা নগদ টাকা দেখিয়েছেন চার লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬, যা জাহাঙ্গীরের হাতে থাকা নগদের ১০ ভাগের এক ভাগের মতো। আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্ত্রীর হাতে নগদ দেখিয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা। আজমতের নিজের কোনো গাড়ি নেই। তার স্ত্রীর একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীর কাছে মোট সোনা আছে ৫০ তোলা। এর মধ্যে নিজের ২০ তোলা এবং স্ত্রীর ৩০ তোলা। স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আজমত। তার কোনো কৃষি জমি নেই। অকৃষি জমি আছে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ, যা জাহাঙ্গীরের ছয় ভাগের এক ভাগের মতো। ৭ শতাংশ জমির ওপর তার নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে আজমতের, যা জাহাঙ্গীরের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আওয়ামী লীগের এ নেতার স্ত্রীর নামেও রয়েছে ২৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ জমি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App