×

সারাদেশ

ছাতকে কৃষকের চোখের জলে মলিন হয়েছে ঈদ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম

ছাতকে কৃষকের চোখের জলে মলিন হয়েছে ঈদ!

ছবি: ভোরের কাগজ

মাঠের পর মাঠে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দিশেহারা কৃষক

ছাতক উপজেলার বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ছত্রাক জনিত রোগে নষ্ট হয়ে গেছে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান। ধান কাটার পরে দেখা যাচ্ছে কোনো ধানেই চাল নেই। আছে শুধু খোসা। এতে হাওর পাড়ের কৃষকদের চোখের জলে এবারের মলিন ঈদে পরিণত হয়েছে। ঋণের ভোজা মাথায় করে বেড়াতে হবে সারা বছর। ব্লাস্ট রোগের পাশাপাশি কয়েক ‌দফায় শিলা বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে উপজেলার হাওর এলাকায় বোরো ফসলের লক্ষ্য মাত্রায় ধ্বসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরের জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় উপজেলার প্রায় সব এলাকায় ধান কাটা উৎসব শুরু হয়ে শেষের পথে। ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের পর মাঠ ও হাওর অংশে অনেকটাই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ব্লাস্ট রোগে কৃষকের ধান সম্পূর্ণ চিটায় পরিণত হওয়ায় ধান কাটতে কৃষকদের মধ্যে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মাঠের ধান নষ্ট হওয়ায় এসব ধান এখন গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ছাতক উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় বিল-হাওর রয়েছে ৬৩টি। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮শ ৩২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উপসী জাতের ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ২ হাজার ২২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানে ছত্রাক জনিত ব্লাস্ট রোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, উপজেলায় হাওরে দু-দফা শিলায় ২ হেক্টর ও ব্লাস্ট রোগে ৩.৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ছাতকের প্রায় সব হাওর গুলোয় বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ব্লাস্ট রোগ‌। বিশেষ করে উপজেলার ঝাওয়া বিল, বালিকান্দি নওয়া বিল, বিলপাড়, পজাকালি পাড়, পশ্চিম বন, জাউয়া, চরমহল্লা, ছৈলা, ইসলামপুর, সিংচাপইরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা জনিয়েছেন, ফসলের জমির এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত ব্লাস্ট রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে প্রথমে ধানগাছের শীষ ভেঙে যায়, ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। ধানের এ বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, আমাদের এবারের লক্ষমাত্রাদের ঘাড়তি হয়নি। তাছাড়া আমরা কৃষকদের বারবার বলেছি আপনারা ৮৮, ৮৯ ও ৯২ জাতের ধানের বীজ ফলনের জন্য। এমনকি তাদের কি ধরনের কিটনাশকের ব্যাবহার করতে হবে তাও জানিয়েছি। কিন্তু তারা শুনে না ভালো ফলনের আশায় পুরোটাই লস হয়েছে। তাদের সাহায্যে সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন আমাদের কাছে তালিকা রয়েছে সরকারি কোন বরাদ্দ আসলে তাদের দেয়া হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঝাউয়া বিলে মাঠের পর মাঠ পাকা ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। এসব পাকা ধানের মধ্যে বেশির ভাগ ধান কাটার কোনো আগ্রহ নেই কৃষকের। কারণ সব ধানই ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। কেউ কেউ গবাদিপশুর খাবারের জন্য কিছু ধান কাটছেন আবার কেউ কেউ ধান নষ্ট হওয়ায় ধান কাটার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

উপজেলার বিলপাড় গ্রামের কৃষক এমরান হোসেন ও একই গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, আমরা ঋণ করে এ বছর জমিতে ব্রি-২৮ ধানের প্রায় ৩০বিঘা চাষ করেছিলেন। প্রথমে ফলন ভালো দেখে মনটা ভরে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় পুরো জমির ধান এখন চিটা। কিছু ধান গরুর খাদ্যের জন্য কাটা হয়েছে। বাকিটা জমিতেই রয়েছে। আমাদের এখন পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সরকারের কাছে আমরা সহায়তা চাই।

রায়সন্তুষপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, প্রায় ১৫/২০ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ ধান লাগাইছিলাম। ফলন ভালো হলেও যখন ধান আসার কথা তখনই ব্লাস্ট রোগে ধান জ্বলে একবারেই শেষ। ধান এখন চিটা হয়ে গেছে। এখন ঋণ কিভাবে দেব সে চিন্তায় দিন কাটছে। এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোনো লোক এসে খোঁজখবর নেয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। সব ধান চিটা হয়ে নষ্ট হওয়ায় ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App