×

সম্পাদকীয়

গ্যাস লাইন ঝুঁকিমুক্ত হবে কবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৮ এএম

রাজধানীজুড়ে যে গ্যাস পরিবহন ও সঞ্চালন লাইনের নেটওয়ার্ক রয়েছে তার বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি ভবনে বিস্ফোরণ গ্যাস লিকেজের কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় লাইনের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা গ্যাসের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গন্ধ ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কোনো কারণে আগুনের সংস্পর্শ পেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল। তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্যাস লিকেজের এমন ঘটনা আমাদের শঙ্কিত করে। একাধিক লাইনে লিকেজের ঘটনায় তিতাসের দায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের বেশির ভাগ পাইপলাইনের ‘টেকনিক্যাল লাইফ’ শেষ হয়ে গেছে। কমপক্ষে ২০ বছর আগে এসব পাইপলাইনের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপের বিভিন্ন স্থানের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাস বের হয়ে আশপাশের শূন্যস্থানে জমা হয়। আগুন, উচ্চ তাপ বা অন্য কোনো গ্যাসের সংস্পর্শে এলেই ঘটে বিস্ফোরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির ক্ষার ও লবণের কারণে পাইপগুলো ক্ষয় হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মরিচা ধরে পাইপ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ছিদ্র। এসব ছিদ্রপথে প্রায়ই গ্যাস বের হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে ফুটো করে গ্যাস সংযোগ দেয়ায় বেশির ভাগ লাইনের অবস্থা জরাজীর্ণ। এর বাইরে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ রয়েছে যেগুলো সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা রয়েছে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও গ্রাহক আঙিনায় রাইজার রয়ে গেছে। তিতাসের অসাধু কর্মীরা টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে এসব বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করে দেয়। অসাধু কর্মীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস লাইনের নজরদারি, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং প্রয়োজনে পাইপলাইন পরিবর্তনে কর্তৃপক্ষের অনিয়ম বা গড়িমসি রয়েছে বলে মনে করি। জনস্বার্থে দ্রুত পুরো তিতাস গ্যাসের নেটওয়ার্ককে ঝুঁকিমুক্ত করার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি জরুরি। পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে যেসব পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল তার টেকিনিক্যাল লাইফ ধরা হয়েছিল ৩০-৩৫ বছর। সেই হিসাবে তিতাসের ৬০ শতাংশের বেশি পাইপলাইনের বয়স ৫৫-৬০ বছরের অধিক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে তিতাস গ্যাসের পুরো পাইপলাইন সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও পাইপলাইন সংস্কার ও প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি, যা দুঃখজনক। অবিলম্বে এসব পাইপলাইন সংস্কার ও প্রতিস্থাপনসহ অবৈধ লাইন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই তার দায় নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ২১টি এলাকার পাইপলাইন বিভিন্ন শিল্পকারখানার লাইনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এসব এলাকার পাইপে গ্যাসের চাপ থাকে সাধারণত ৫-৭ পিএসআই। ঈদের ছুটির কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় ক্রমান্বয়ে গ্যাসের চাপ বেড়ে ৩০ পিএসআইর বেশি উঠে যায়। যে কারণে পাইপলাইনের ছিদ্রপথে গ্যাস বের হয়ে পুরো এলাকায় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। রাজধানীসহ সারাদেশে তিতাসের পাইপলাইনে লাখ লাখ ছিদ্র আছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ও বড় দুর্ঘটনা রোধে যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস সরবরাহের এসব পাইপলাইন ঝুঁকিমুক্ত করতেই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App