×

সারাদেশ

দুই ইউএনও’র দোহাই দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান দিলেন জলাশয় ইজারা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫০ পিএম

দুই ইউএনও’র দোহাই দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান দিলেন জলাশয় ইজারা!

ছবি: সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভবানীপুর, মহাদেবপুর এবং ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বড় ধূলণ্ডী এলাকার বিশাল লেকটি (জলাশয়) দুই ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেলেদের কাছে বিধি লঙ্ঘন করে ইজারা দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার মানুষের পানি সংকট দূর করার লক্ষ্যে প্রায় ৪০ বছর আগে সরকারি নির্দেশনায় শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন আহমেদ মণ্টু ঘিওর উপজেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে ক্ষিরাই নদীর বাঁক পরিবর্তন করে প্রায় ৩২ বিঘা জায়গা জুড়ে এই লেকটি তৈরি করেছিলেন। বহুবার বহু দুষ্টচক্র এই সরকারি লেকটি ইজারা দিয়ে অর্থ বাণিজ্যের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ অবধি তারা কেউ তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেননি।

সম্প্রতি শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান এবং ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওয়াল খান মহাদেবপুর এলাকার জেলে সম্প্রদায় শ্যামল হলাদার ও দীনেশ হালদারের নিকট দেড় লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য লেকটি ইজারা দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

মহাদেবপুর, ভবানীপুর এবং বড় ধূলণ্ডী গ্রামের লোকজন জানান, ইতোপূর্বে এই লেকটি বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ইজারা দিয়ে আর্থিকভাবে সুবিধা নিয়েছেন। এলাকার জনগণের স্বার্থে আমরা প্রায় ৭ বছর আগে গণসাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের নিকট প্রেরণ করলে তিনি তখন লেকটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু এখন আবার মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিলে জেলেদের কাছে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, এই ইজারা বাতিল করে জলাশয়টি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

ইজারাপ্রাপ্ত মৎস্যজীবি শ্যামল ও দীনেশ হালদার জানান, ওই লেকের ইজারা বাবদ আমরা পুরো দেড় লাখ টাকা মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমজাদ হোসেনের কাছে দিয়েছি।

ইজারা বাবদ দেড় লাখ টাকার বিপরীতে কোন রশিদ পেয়েছেন কিনা প্রশ্নে দীনেশ হালদার বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা হাতে পাইনি। তবে আওয়াল চেয়ারম্যান বলেছেন, রশিদ দেবেন। আওয়াল চেয়ারম্যান আমাকে আরো বলেছেন, কেউ কিছু বললে সেটা তিনি দেখবেন।

মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, মহাদেবপুরের জেলে শ্যামল ও দীনেশ হালদারের কাছে দেড় লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দিয়েছি। এই টাকা মহাদেবপুর ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের জন্য সমহারে বণ্টন করা হবে। আমি শিবালয়ের ইউএনও’র সাথে কথা বলেছি। পরিষদের উন্নয়নের স্বার্থে দুই উপজেলার ইউএনও’র সম্মতিতেই এই লেক জেলেদের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে।

মহাদেবপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক জানান, লেক ইজারা দেবার বিষয়ে জানতে পেরে ঈদের আগেই আমি শিবালয় উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।

বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওয়াল খান জানান, আমি ঘিওরের ইউএনও সাহেবের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে ইজারা দেবার জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। জেলেদের কাছে ইজারা দেবার ক্ষেত্রে আমরাও তাদেরকে কোন লিখিত কাগজপত্র দেইনি এবং দেবো না।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহিদুর রহমান জানান, ইজারা দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার দপ্তর থেকে কাউকে কোন বিষয়ে মৌখিক অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। আমি চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে কোন মৌখিক অনুমতি দেইনি।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, জেলা প্রশাসন থেকে এ ধরনের কোন ইজারা দেয়া হয়নি। কোন জলাশয় ইজারা দেয়ার এখতিয়ার ইউপি চেয়ারম্যানগণ রাখেন না। আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App