×

জাতীয়

দাম বেশি, কেনাকাটা কম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫২ এএম

দাম বেশি, কেনাকাটা কম

ফাইল ছবি

ক্রেতা : পোশাকের দাম আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রেতা : প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি

ঈদের বাকি আর মাত্র একদিন। উৎসবের আমেজে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন সবাই। নিজেদের পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের জন্য পছন্দের পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, পারফিউম কেনায় ব্যস্ত তারা। এই তীব্র দাবদাহে উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত ক্রেতারা কেনাকাটার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলগুলোই বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষজন ছুটছেন হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে নারী ক্রেতারা জুতা, গহনা, আতর, কসমেটিকসসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছেন। এমনকি যারা জামা-কাপড় কিনতে দেরি হয়েছে তারাও শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত। সেইসঙ্গে পুরুষ ক্রেতারাও পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, জুতা, স্যান্ডো গেঞ্জি, চশমাসহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করছেন। বড়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশুদের কেনাও জমজমাট। তবে অন্যান্য পোশাকের তুলনায় মেয়েদের আগ্রহ সুতি কাপড় ও থ্রিপিসে। শপিংমলে থাকা ছেলেদের দোকানেও ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর শপিংমলগুলো দিনের বেলাতেই জমে উঠেছে। যারা মূল কেনাকাটা শেষ করেছেন, তারা প্রসাধনীসহ আনুষাঙ্গিক কেনাকাটায় ব্যস্ত। তবে বাজারে প্রায় সব জিনিসের দামই চড়া বলে কড়া অভিযোগ ক্রেতাদের। বিক্রেতাদের কণ্ঠেও শোনা গেল হতাশার সুর। তারা বলেছেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে যে মন্দাভাব- তা এবারের ঈদ বাণিজ্যকে অনেকটাই স্নান করে দিয়েছে।

হাতিরপুল এলাকার ইস্টার্ন প্লাজায় আসা রুবা মোস্তফা বলেন, শাড়িসহ চারটি জামা কিনেছি গত সপ্তাহে। কিন্তু কসমেটিকসসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। ফলে দিনের বেলায়ই চলে আসছি কেনাকাটা করতে। রুবা বলেন, সবকিছুর দাম অতিরিক্ত হওয়ার

কারণে একটু মন খারাপ। তারপরও ঈদ বলে কথা। সন্তানদের ঈদের সাজে সাজাতে বাধ্য হয়ে হলেও কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো। বসুন্ধরা শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে ঈদ কেনাকাটার শেষ মুহূর্তেও ভিড় নগরীর এই জনপ্রিয় মার্কেটটিতে। এই শপিং মলে আসা ক্রেতা সৌরভ রহমান বলেন, ঈদের কেনাকাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছে হাতে টাকা থাকবে না। সবকিছুর দাম অতিরিক্ত। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা শেষ করেছি আগেই। আত্মীয়-স্বজনের জন্য আরো বাকি ছিল, তাই আজ কিনতে এসেছি।

সৌরভ বলেন, গত বছর যে কোয়ালিটির পাঞ্জাবি কিনেছি ১৮০০ টাকায়; সেই পাঞ্জাবির দাম চার হাজার টাকা চাচ্ছে বিক্রেতারা। সবকিছুর দাম বাড়ছে, পাশাপাশি কাপড়ের দাম বেড়েছে দুই তিনগুণ। দামের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও ফিকে হবে।

বসুন্ধরা শপিংমলে মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছে শিশু মিনি। ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের পোশাক দেখছে। চোখ তার দোকানে ঝোলানো লাল ঝলমলে জামার দিকে। মিনি বলে, আমার লাল রংয়ের জামা খুব পছন্দ। এবার দাদুর জন্য একটা শাড়ি কিনতে এসেছি।

ইস্কাটন থেকে আসা সৈয়দা বদরুন নেসা বলেন, দুই দিন আগে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা শেষ করেছি। আজ এসেছি নিজের জন্য কসমেটিকস ও জুতা কিনতে। ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি রাজশাহী যাব। তবে গত ঈদের চেয়ে এই ঈদে খরচটা একটু বেশিই হচ্ছে। সবকিছুর দাম অনেক বেড়েছে। না কিনে উপায়ও নেই। একটা ঈদ আসে, এই দিনে সবাই মিলে আনন্দ করব। তবে দামটা একটু সহনশীল হলে ভালো হয়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত মাহমুদ বলেন, এবার ঈদের পোশাক, জুতাসহ সবকিছুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। বিক্রেতারা সুযোগ পেলেই বলছে, বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় পোশাক সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে বাইরে থেকে পোশাক বেশি আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেড়েছে, এতটা বেশি? ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা এক ধরনের নীরব দুর্বৃত্তায়ণ চালাচ্ছে। দিস ইজ টু মাচ। এসব মনিটরিং করারও কেউ নেই।

গাউসিয়া মার্কেটের ভেতর ও বাইরে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। ফুটপাতেও জমে উঠেছে কেনাকাটা। যেখানে নিম্নআয়ের মানুষের আনাগোনাই বেশি। জুরাইন থেকে ঈদ কেনাকাটা করতে এসেছেন দুই বোন সাদিয়া আলমগীর বর্ষা আর সানজিদা আলমগীর তৃষা।

বর্ষা বলেন, এতদিন অতিরিক্ত গরমের কারণে মার্কেটে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। এখন না এসে উপায় নেই। ঈদ কড়া নাড়ছে। মায়ের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি নিয়েছি। এরপর ছোট ভাই বোনের জন্য কেনাকাটা করবো। আগে থেকেই সবকিছুর দাম বাড়তি; এখন ঈদকে ঘিরে মনে হচ্ছে আরো দাম বেড়েছে। আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ, সীমিত আয়। বাড়তি দামে আমাদের অন্য খরচে টান পড়ে। সবচে বড় কথা মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। হতাশা গ্রাস করছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জায়গা কোথায় হবে জানি না।

জানতে চাইলে পোশাক বিক্রেতা আরমান খান বলেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে। বিভিন্ন রংয়ের পোশাক থাকায় মানুষ নিজেদের পছন্দমতো কেনাকাটা করতে পারছেন। দাম কিছুটা বাড়লেও দামাদামি তর্কাতর্কি করে অনেকে কিনছেন। কিন্তু মার্কেটের ভেতরে তো আরো বেশি দাম। এজন্য সেদিকে না গিয়ে এখানেই ভিড় করেছেন।

ফুটপাতের আরেক বিক্রেতা মোশারফ বলেন, দুই সপ্তাহ আগে থেকে মোটামুটি ভালো বিক্রি হয়েছে। তার আগে তেমন বিক্রি হয়নি। আজ শেষ সময়ে ঈদের আগে লাভ অল্প হলেও নগদ পুঁজিটা তুলতে পারব। তবে ভিন্ন মত দিলেন গাউছিয়া ফ্যাশন হাউজের বিক্রেতা শরীফ। তিনি বলেন, ক্রেতা অনেক বাড়ছে, তবে গত ঈদের মতো বিক্রি হচ্ছে না।

ইস্টার্ন প্লাজার তন্নী কসমেটিকস এন্ড ইমিটেশন দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, কসমেটিকস ও ইমিটেশন সামগ্রীগুলো দেশের বাইরে থেকে আসে। তাই আমাদের এখানে একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ঈদ এলেই সব জায়গায় বেশি দাম। আমরাও বেশি দামে কিনি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App