×

সারাদেশ

ঈদের পরেই চট্টগ্রামের লালদিঘীতে জব্বারের বলীখেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম

ঈদের পরেই চট্টগ্রামের লালদিঘীতে জব্বারের বলীখেলা

ছবি: ভোরের কাগজ

বসবে তিনদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার আসর

ঈদের ছুটির পরপরই চট্টগ্রামে লালদিঘীর মাঠে জমবে ঐতিহাসিব আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী এই বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে বলী খেলা হবে ২৫ এপ্রিল। ইতিমধ্যেই লালদিঘী মাঠে বলী খেলার মঞ্চ তৈরী হয়ে গেছে। আর ২৬ এপ্রিল বিকেল ৩ টায় লালদিঘী মাঠে ঈদ আনন্দ উৎসবেরও আয়োজন করা হয়েছে চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে।

তবে লালদিঘী মাঠে শুধু বলীখেলা হবে। আর বৈশাখী মেলা হবে লালদিঘীর আশপাশের প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এমনটাই জানালেন আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা( চট্টগ্রামের ভাষায় বলী খেলা) ও বৈশাখী মেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। মূলত, এই জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামবাসীর জন্য অন্যরকম আনন্দ বয়ে আনবে এমনটাই আশা নগরবাসীর।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল বেলা ৩টায় লালদিঘীর মাঠে তৈরী মঞ্চে শুরু হবে বলীখেলা। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ঈদের পরেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বিক্রেতারা মেলায় আসতে শুরু করবেন। এরইমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলিখেলার মঞ্চসহ সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।

গত বুধবার তিনি ট্রফি, জার্সি এবং থিম সংগীত উন্মোচন করেন। এরপর লালদিঘীর চসিক পাবলিক লাইব্রেরিতে সাংবাদিকদের কাছে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য রক্ষায় আমি বদ্ধপরিকর। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের অংশ চট্টলাবাসীর গর্বের জব্বারের বলীখেলার আয়োজনে কোনো কিছু কমতি থাকবে না। তিন দিন ধরে বৈশাখী মেলাও হবে।’ আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার এবার ১১৪তম আসর বসছে।

মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হলেও মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে স্থাপিত ছয় দফা মঞ্চ উন্মুক্ত থাকবে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলীখেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদিঘীর মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদিঘীর মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা।

বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালী পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে জব্বারের বলীখেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। করোনা কাটিয়ে ২০২২ সালে জাঁকজমকভাবে ১১৩তম আসরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষমুহূর্তে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বলীখেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ সংস্কার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার ইতিহাসের আলোকে স্থায়ী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ আরও কিছু স্থাপনা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় এবং রমজান বিবেচনায় নিয়ে বলীখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল কমিটি।

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে লালদিঘী মাঠের পরিবর্তে গোলচত্বরে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ১১৪তম আসরও লালদিঘী ময়দানের পরিবর্তে গোলচত্বরে করার ঘোষণা দেয়া হলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ, লালদিঘী ময়দান গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। শেষপর্যন্ত চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের হস্তক্ষেপে শত বছরের ভেন্যু লালদিঘীর ময়দানেই হচ্ছে বলীখেলা।

ছবির ক্যাপশন: চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে বলীখেলার জন্য তৈরী মঞ্চসহ এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র রেজাউল করিম ও মেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App