×

সারাদেশ

যশোর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৪ এএম

যশোর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

ছবি: আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর)

যশোর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

ছবি: আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর)

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। তারা সভা, সমাবেশ, উঠোন বৈঠক, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং তাদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের হ্যান্ডবিল ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ও ভোটারদের বিভিন্ন আশ্বাস প্রদান করছেন।

এছাড়া প্রার্থীরা বিভিন্ন ইউনিয়নসহ হাটবাজার, চায়ের দোকানে গিয়ে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময়, ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করছেন এবং বিভিন্ন গাছ বা সুবিধাজনক স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার টাঙ্গিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। অসুস্থ নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেভাগে মাঠ গরম করার জন্য নেতারা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন।

যশোরের ঝিকরগাছা-চৌগাছা এই দুই উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন। এই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং-গ্রুপিং করছেন। এই আসনে ভোটারের সংখ্যা ৪,৫৩,২৩৮ জন। দুই উপজেলা মিলে মনোনয়ন প্রার্থীরা মাঠ গরম করছেন।

বর্তমান আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির, সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলী রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. এ.বি.এম আহসানুল হক আহসান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশীষ ইসলাম দেবু, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস.এম হাবিবুর রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আহব্বায়ক গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোড সিদ্ধান্ত নিবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবে নৌকার মাঝি।

এদিকে, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য ও যশোর কমার্সের সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেরা নাজমুল মুন্নি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. মো. ইসাহক, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোর্তজা এলাহী টিপু, ঝিকরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আরশাদুল আলম, জাতীয় পার্টির নেতা অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম।

একাদশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ডা. নাসিরউদ্দীন দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধিকে বলেন, গত ৪ বছর যাবত দিনরাত পরিশ্রম করে চৌগাছা-ঝিকরগাছার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

তিনি জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কারিগর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সার্বিক সহযোগিতায় ২৩০ কি.মি. পাঁকা রাস্তা নির্মাণ, ৩৭টি কলেজ স্কুল ভবণ নির্মাণ, ১০টি মাদ্রাসা এবং ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ২২৪টি সরকারি ঘর নির্মাণ, ৮৪৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।

ডা. নাসিরউদ্দীন বলেন, চৌগাছা উপজেলায় ১০০ শয্যা হাসপাতাল করা হয়েছে এবং আগামীতে জননেত্রীর সহযোগিতায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে ঝিকরগাছা হাসপাতালকেও ১০০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে চৌগাছা-ঝিকরগাছা এই দুই উপজেলায় সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি, সে কারনে মানুষ শান্তিতে ব্যবসা-বানিজ্য ও রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পাচ্ছে। এছাড়া সরকার কর্তৃক বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা এবং দুস্থ মানুষের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণমন্ত্রনালয় থেকে অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শহীদ মশিয়ুর রহমানের হাত ধরে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো তার সাথে থাকবো। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার হিসেবে তার পাশে থাকবো সে কারণে তিনি আমাকে নৌকা প্রতীক দেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমি এমপি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, দুই উপজেলায় দুটি সরকারি কলেজ, দুটি হাইস্কুল সরকারি, শতভাগ বিদ্যুৎ, সিংহভাগ গ্রামীণ সড়ক পাঁকা, দুই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধ কমপ্লেক্স, মডেল মসজিদ, মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প আমার সময় অনুমোদন করেছিলাম, সে কাজ এখনো চলমান অবস্থায় আছে। প্রাইমারি, হাইস্কুল ও কলেজের শতভাগ স্মার্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা তহবিল থেকে অনুদান, ব্রিজ, কালভাট, অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজের সাথে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। গত সাড়ে চার বছর বিরামহীন গণসংযোগ, নবীন প্রবীনদের মতামত নির্বিশেষে, ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছি, সেই বিবেচনায় আগামীতে নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি, আমি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জয়লাভ করবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, বিগত বিএনপি জামায়াত ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জীবনকে বাজি রেখে সকল অপশক্তির মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছি। আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের সাথে আছি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে ঝিকরগাছা-চৌগাছাকে আরো উন্নত করতে সক্ষম হবো।

গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস বলেন, আমি মাটি মানুষের রাজনীতি করি, দেশ ও জাতীর কল্যাণে রাজনীতি করি, আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে তার সাথে আছি। ঝিকরগাছা-চৌগাছা এই দুইটি উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ করে মানুষের মন জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাকে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাকে নৌকা প্রতিক প্রদান করেন তাহলে দুই উপজেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবো। আমি সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকবো।

এ্যাড. আহসান বলেন, আমি ৪৩ বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। উন্নয়নের কারিগর সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা করেছেন, সেই ঘোষণার সাথে আমি অংশীদার হতে চাই। আমি ঝিকরগাছা চৌগাছার মানুষের সেবা করার জন্য নৌকা মার্কার প্রত্যাশা করছি। আশাকরি জননেত্রী আমার প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন।

মোস্তফা আশীষ ইসলাম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর নিজ যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) সংসদীয় আসনের দুই লাখের বেশি ভোটারদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভয়েস কল পাঠিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এছাড়া দুই উপজেলার নতুন ভোটারদের নিয়ে মিটিং করেছি, সেখানে সনদপত্র ও বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী প্রদান করেছি। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি হতে চায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেরা নাজমুল মুন্নি বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না, আমরা রাজপথে থেকে তত্তাবধায়ক সরকার গঠন করেই তবে ঘরে ফিরবো।

ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মর্তুজা এলাহী টিপু বলেন, এই অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App