×

অর্থনীতি

ব্যাংক বন্ধ, ফুটপাতে চড়া দামে নতুন নোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৮ পিএম

আগেরবারের তুলনায় এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কম পরিমাণে নতুন নোট ছাড়া ও শুরু থেকেই টাকা সংগ্রহের যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে; এমন প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনের ফুটপাতসহ খোলা বাজারের সবখানে নতুন নোট বিক্রি হয়েছে চড়া দামে।

১০, ২০ ও ৫০ টাকা মানের নতুন নোটের এক বান্ডিল (১০০ পিস) বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত ২৫০ টাকা দরে; যা এ পর্যন্ত রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি। গতবছরও এসব নতুন নোট সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৮০-১০০ টাকায়।

নতুন নোটের চাহিদা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা যে পরিমাণ ছেড়েছে শুরু থেকেই তা সংগ্রহে বিড়ম্বনা দেখা দেয়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ঈদ উপলক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়েছে। আগেরবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছেড়েছিল ২৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর গত ঈদুল আযহার সময়ে ছেড়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি ঈদের সময়েই নতুন টাকার চাহিদা বেড়ে থাকে। এবার নতুন ছাপানো নোটের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগ। বাজারে কি পরিমাণ টাকার উপস্থিতি রয়েছে তা দেখভাল ও কোন মুদ্রা কতো পরিমাণে থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বটি পালন করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কারেন্সি বিভাগ। বর্তমানে দেশে ১ টাকার ধাতব মুদ্রা, কাগজের পাশাপাশি ধাতব মুদ্রা রয়েছে ২ ও ৫ টাকার, আর ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ১০০০ টাকার কাগজে ছাপানো মুদ্রা রয়েছে।

বিভিন্ন মানের এসব মুদ্রা কোনটি কি পরিমানে থাকলে ভারসাম্য বজায় থাকবে তাও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব এই বিভাগের। এবার নতুন টাকার পরিমাণ কম ছাড়া ও শুরু থেকেই বিরম্বনা দেখা দেয়ার প্রভাব পড়েছে ফুটপাতে টাকা বিক্রি হওয়া টাকার দরের ওপর। এবারের ঈদে আগের চেয়ে কম টাকা বাজারে ছাড়ায় সর্বশেষ কর্মদিবস ১৮ এপ্রিল দিনের প্রথম ভাগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট ফুরিয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকে শেষ কর্ম দিবসে টাকা নিতে চেয়েছিলেন। তাদের অনেকেই এসব নোট পাননি। কাউন্টারে টাকা না পেয়ে বেলা সাড়ে তিনটার সময়েও কারেন্সি অফিসারের রুমের সামনে অনেক কর্মকর্তাকেই ভিড় জমাতে দেখা গেছে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল থেকে নতুন টাকার নোট বিনিময় শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, এবার ঈদুল ফিতরে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হবে; যা বাংলাদেশ ব্যাংওকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিময় করা হবে।

প্রয়োজনে আরো বেশি পরিমাণে নতুন নোট বাজারে ছাড়ার কথাও জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের বারের চেয়ে এবার নতুন নোট কম ছাড়ার কারণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, চাহিদা থাকায় ১০, ২০ ও ৫০ টাকা মানের নোট বেশি গেছে।১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) স্টকে ছিল। এখন তার চেয়ে বেশি বা কম ছাড়া হয়েছে কি না, সঠিক হিসাব এখনো করা হয়নি। ঈদের আগে গত ১৮ এপ্রিল ছিল ব্যাংকের শেষ কর্ম দিবস। ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাধারণ ‍ছুটি ঘোষণা করায় ২১, ২২ ও ২৩ এপ্রিল মিলিয়ে মোট পাঁচদিন বাংলাদেশে কার্যরত সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অবশ্য ব্যতিক্রম হিসেবে পোশাক ঘন শিল্প এলাকা সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক শাখা খোলা থাকবে শুক্রবার পর্যন্ত।ঢাকা মহানগরী ও শিল্প এলাকায় ছুটির দিন ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিলেও ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শুধু তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের লেনদেনের জন্য ব্যাংক খোলা রাখার কথা বলা হয়। সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, ঢাকা মহানগরিতে এডি শাখাগুলো সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে। অবশ্য একটি এলাকায় একটি শাখাই খোলা রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কতোগুলো শাখা খোলা থাকবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। নতুন টাকা এই সময়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নতুন টাকা নিয়ে কিভাবে বিনিময় করবে তার কোনো সদুত্তর তিনি দেননি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই সময়ে আসলেই কোনো টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেবে কিনা।

ফুটপাতে চড়া দাম: ব্যাংকে টাকা না পেয়ে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটকের সামনের ফুটপাতে নতুন টাকা নিতে এসে অনেকেই দেখেন দাম অনেক চড়া। এ বিষয়ে একজন গ্ৰাহক বলেন, এই টাকা নিতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে বিক্রেতাকে। তাও অনেক মুলামুলির (দর কষাকষি) করার পর। বিক্রেতা আরো ১৫০ টাকা দাবি করেন।

গত কয়েক বছর ধরে ৫ টাকার কাগুজে নোট বাজারে ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, ধাতব মুদ্রার প্রচলন বাড়াতে ২ ‍ও ৫ টাকার কাগুজে নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। কিন্তু এবার সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ৫ টাকার কাগুজে নোটের প্রচলন ফের বাড়াতে শুরু করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আইনে মুদ্রা বিক্রয় অপরাধ। বাংলাদেশের অনুমোদিত মুদ্রা বিনিময় করতে অতিরিক্ত কোনো ফি, চার্জ বা অর্থ নিতে পারবে না কেউ। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটকের সামনেসহ একাধিক স্থানে নতুন টাকা বিক্রি হচ্ছে সারা বছর ধরেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App