×

সারাদেশ

কবি সেলিনা শেলীকে স্বপদে বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

কবি সেলিনা শেলীকে স্বপদে বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

ছবি: ভোরের কাগজ

কবি সেলিনা শেলীকে স্বপদে বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন
কবি সেলিনা শেলীকে স্বপদে বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

কবি-শিল্পী ও শিক্ষক সেলিনা শেলীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে নিবর্তনমূলক আচরণ করেছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল ও তার পূর্ণ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের পেশাজীবী-সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেড়াগি পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানব বন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। অতিসত্বর এ দাবি কার্যকর না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। ফেসবুকে দেয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে কবি, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সেলিনা আক্তার শেলীকে হয়রানির প্রতিবাদে মাননবন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন দেশে একজন নাগরিক তার মত প্রকাশ করতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না, এমন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু আমাদের দেননি। ধর্মের নামে নানা অজুহাত তুলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত দেশের মুক্তচিন্তার নাগরিকদের যেভাবে হেনস্থা করছে, এর বিরুদ্ধে আমরা সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই আইন অবিলম্বে বাতিল করুন। ধর্মান্ধ-প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর লাগাম টেনে এদেশের আপামর নাগরিকদের স্বাধীনভাবে বসবাস ও মতপ্রকাশের অধিকার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’ বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি চত্বরে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি করেছে। কোনো ধর্মীয় পরিচয়ে কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। কিন্তু এখন হিন্দু-মুসলিম যে বিভাজন, এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। চট্টগ্রাম বন্দরে আমি একবার গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের গণকবরগুলো দেখতে। একটি গণকবরের উপর রাস্তা হয়ে গেছে, তার কোনো চিহ্ন নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে কোনো ভূমিকা রাখেনি। আমি বন্দর কর্তৃপক্ষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। এই বন্দর কর্তৃপক্ষ অহেতুক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সরকারকে বিরুদ্ধে লাগানোর চেষ্টা করছে।'

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘আজ হতাশা নিয়ে আমি বলতে চাই, আমরা কথা বলতে পারবো না, আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারবো না, এমন বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধু আমাদের উপহার দেন নি। আপনারা বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী হিসেবে নিজেদের দাবি করেন। আমরা প্রমাণ চাই যে, আপনারা বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী। বন্দরের যে কুলাঙ্গাররা স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য সেলিনা শেলীর গলা কাটার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমাদের কণ্ঠ কেউ থামাতে পারবে না। আমরা কথা বলে যাবো।'

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, যারা এখনও অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাস করে, তারাই সরকারকে বিপদে ফেলতে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে পারি না। সামনে নির্বাচন, সেজন্য ধর্মান্ধ জামাতি, রাজাকার-আলবদররা আবার মাথা তোলার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, যারা উসকানি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উসকানিদাতারাও কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বরখেলাপ করেছেন। কারণ তারাও ডিজিটাল মাধ্যমে সেলিনা শেলীকে হেনস্থা করছে।’ কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে মানুষের মুক্তচিন্তাকে রুদ্ধ করা হচ্ছে। এই আইন এখন ব্লাসফেমি আইনে পরিণত হয়েছে। আমরা এই আইন অবিলম্বে বাতিল চাই।’

কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, 'রমজান এবং রামাদানের ভাষাগত যে তফাৎ কিংবা আমরা যে রমজানুল মুবারক বলে থাকি, সেই কথাটিই সেলিনা শেলী বলেছিলেন। এই পোস্টটি তিনি আবার প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে হয়রানি, হুমকিধমকি বন্ধ হচ্ছে না। অথচ ইউটিউব কিংবা ফেসবুক উল্টান, ধর্মীয় বয়ানের নামে কতরকমের আস্ফালন, কৌতুক, ঠাট্টা- মশকরা চলছে। কিন্তু এগুলোর জন্য বিচার দাবি করার কেউ নেই। সেলিনা শেলী বলার সাথে সাথেই এটা বিরাট একটা ঘটনা হয়ে গেলো! সবাই বিচার চাইতে লাগলো। অন্ধকারের শক্তি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আড়ালে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা, চবি অধ্যাপক শিক্ষক হোসাইন কবির, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, কবি রাশেদ রউফ, সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্ত, সাহিত্যিক আলম খোরশেদ, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, কবি অভীক ওসমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি কবি আশীষ সেন, চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি প্রনব চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক রাসেল, শিল্পী শ্রেয়সী রায় প্রমুখ।

সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি শিল্পীগোষ্ঠী, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন, ছাত্র ইউনিয়ন, সুচয়ন ললিতকলা কেন্দ্র, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর, যুব ইউনিয়ন এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App