×

সম্পাদকীয়

লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি : সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২২ এএম

লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি : সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

সারাদেশে অস্বাভাবিক তাপদাহে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় তাপদাহের পারদ উঠেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকায় লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ সময়েই থাকে গ্রীষ্মকাল। রোজা শেষের দিকে। রোজার শুরু থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে রামপাল, আশুগঞ্জ নর্থ ও আশুগঞ্জ ইস্ট- এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রæটির কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ তিনটি কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এগুলো বন্ধ হওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেড়েছে। কোথাও কোথাও একটানা এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনে-রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে। দ্রুত মেরামত করে এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ¦ালানির অভাব, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, আগামী জুন মাসে কয়েকটি গ্যাসকূপ থেকে গ্যাসের জোগান পাওয়া গেলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিল্প উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প নেই। এছাড়া রমজানের এই সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত পর্যাপ্ত জ¦ালানির সংস্থান করতে না পারলে লোডশেডিং কমবে না। উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকারের সদিচ্ছা ও চেষ্টা রয়েছে। আমরা আশা করি, এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই বেরিয়ে আসবে দেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় বাধা জ¦ালানি সংকট। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জ¦ালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিকল্প এসব ক্ষেত্র কাজে লাগানো ছাড়া উপায় নেই। জনসাধারণেরও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ হলে তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে। মোট কথা, জনভোগান্তি নিরসনে শহর ও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App