×

সম্পাদকীয়

এবার নিউমার্কেটে আগুন : সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০২ এএম

বঙ্গবাজারে আগুনের রেশ কাটতে না কাটতেই নিউমার্কেট-সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এই বিপণিবিতানের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কেটের দোতলা ও তিন তলায় সবই পোশাকের দোকান। গতকাল শনিবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ধোঁয়ায় মালপত্র বের করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এর আগে ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ছোট-বড় দোকান পুড়ে যায়। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে পুরান ঢাকার নবাবপুরের ২০টি গুদাম পুড়ে যায়। ঈদের আগে মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গভীর রাতে মার্কেট বন্ধ করে দেয়ার পর ভেতরে কারো থাকার কথা না। আর মার্কেট খোলার আগেই ভোরে আগুন লাগল- বিষয়টি ভাবনার। সম্প্রতি মার্কেটগুলোতে আগুন লাগছে, এটা কোনো নাশকতা কিনা, তা জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আগুনের বিষয়টি উঠে আসে। সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। অগ্নিকাণ্ডে মার্কেট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও কম নয়। ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল বঙ্গবাজার মার্কেটকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০ বার নোটিস দেয়া হয়েছে। তবুও এই মার্কেটের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়নি। গত বছর সারাদেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ৫ মার্চ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার শিরিন ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন ঢাকার মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক। গত বছরের সব থেকে ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতার অভাবেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। তাদের মতে সিটি করপোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অতীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে নাগরিকদেরও ভূমিকা রয়েছে। কেবল সচেতন হলেই অনেক অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও কারখানা থাকলেও তার সঠিক হিসাব নেই ফায়ার সার্ভিসের। অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩-এর ৭ ধারা অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি হয়েছে অনেক বহুতল ভবন। এর প্রধান কারণ আইন অনুযায়ী সাত তলার উপরে (২০ ফিট) গেলে সেটির ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন দরকার। কিন্তু রাজউক ১০ তলা পর্যন্ত অনুমোদন দিয়ে থাকে। ফলে ফায়ার সার্ভিস অ্যাকশনে গেলে রাজউকের অনুমোদন দেখে কিছু করার থাকে না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার পরিধি বাড়ানো খুব দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App