×

জাতীয়

আওয়ামী লীগে ক্ষমা প্রার্থনার হিড়িক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০৭ এএম

আওয়ামী লীগে ক্ষমা প্রার্থনার হিড়িক

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলেছে ক্ষমা প্রার্থনার হিড়িক। এখন পর্যন্ত আট শতাধিক নেতাকর্মীকে ক্ষমা করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত সাধারণ ক্ষমার চিঠিতে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা করা হয় এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তা ক্ষমার অযোগ্য হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আপনার বিরুদ্ধে আনীত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না, মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় দলের সিদ্ধান্ত অমান্যের অপরাধে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী, তাদের পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা ও পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের ক্ষমার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এতে সাড়া দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী। তাদের বেশিরভাগই ক্ষমার চিঠি গ্রহণ করে দলীয় কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেছেন।

আওয়ামী লীগ দপ্তর সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সহস্রাধিক তৃণমূল নেতাকর্মী ক্ষমার জন্য আবেদন করেছেন। প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা ক্ষমার আবেদন দপ্তরে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ক্ষমার চিঠি সশরীরে এসে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের ক্ষমার চিঠি দপ্তরে জমা আছে, আবেদনকারী সংগ্রহ করেননি। আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন, যারা সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদনই করেননি। দলে থেকে নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করা, সংগঠনের সঙ্গে নানারকম প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এর মধ্যে দলের মন্ত্রী, সিটি করপোরেশনের মেয়র, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ বা গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতারাও রয়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন যারা ক্ষমার আবেদন করেছিলেন, তাদের ক্ষমা করা হয়। অন্যরা আবেদন করলে, তাদেরও ক্ষমা করা হবে বলে জানানো হয়।

এরপরই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করার চিঠি দেওয়া হয়, যা এ বছরের ১ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়। এরপর শতশত নেতাকর্মী সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন করে চিঠি গ্রহণ করেন। বহিষ্কৃতদের অনেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ শুরু করেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ ও দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ডা. মুরাদ হাসানকে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে শুরু করলেও সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন করেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, নির্বাচনে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাদের অনেকেই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এলাকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা থাকার পরও নানা হিসাবের মারপ্যাঁচে মনোনয়নবঞ্চিত হন অনেকে। অনেকে আবার দীর্ঘদিন দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেও মনোনয়ন না পেয়ে অভিমান থেকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যান। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখতে এবং কর্মী-সমর্থকদের চাপেও অনেকেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃণমূলের বহিষ্কার করা নেতাদের বেশির ভাগই দীর্ঘদিন ইউনিয়ন এবং জেলা-উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন।

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, ক্ষমা পাওয়া নেতাদের সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। সাধারণ ক্ষমার আওতায় যে বা যারা আবেদন করছেন, তাদেরই ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত চিঠিও ক্ষমাপ্রার্থীদের দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ভালো কাজে পুরস্কার, খারাপ কাজের শাস্তি; এটাই স্বাভাবিক। দলের গঠনতন্ত্র অমান্য করে যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আবার গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাদের ক্ষমাও করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের এই ক্ষমা প্রদর্শনকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে অতীতের ভুলভ্রান্তি শুধরে সবাই দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। কেউ যদি তা না করে, তবে দায় তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App