×

জাতীয়

তাপদাহে নাভিশ্বাস প্রাণ ও প্রকৃতির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০৪ এএম

তাপদাহে নাভিশ্বাস প্রাণ ও প্রকৃতির

ছবি: সংগৃহীত

আর একদিন পর বিদায় নিচ্ছে চৈত্র মাস। চৈত্রের শেষ সময়ের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ আর গরম লু হাওয়ায় পুড়ছে নগর, পুড়ছে গ্রাম, পুড়ছে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথার ওপর গনগনে সূর্যের এমন দাপটে মানুষের সঙ্গে ভুগছে প্রাণপ্রকৃতিও। তার ওপর পবিত্র রমজান মাস। এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শিশুসহ সবারই নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এমন অবস্থায় কোনো স্বস্তির খবর দেয়নি আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপদাহ চলবে আরো কয়েকদিন। আপাতত কয়েকদিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। গরমের তেজ আগামী কয়েক দিনে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছুঁতে পারে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ তাদের। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় এক বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে হয়েছে, সারাদেশে বয়ে চলেছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গত ১০

এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭ দিন সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ ছাড়াও রংপুরের নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। দিনে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকাতে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এছাড়াও বায়ুমানে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় গতকাল সপ্তম স্থানে ছিল রাজধানী ঢাকা। এদিন সকাল ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ১৭৭, যা বাতাসের মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হচ্ছে। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রা বাড়বে। সেইসঙ্গে তাপদাহও বাড়বে। গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ : চৈত্রের চিরায়ত দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঝড়-বৃষ্টির আভাস নেই। দেখা নেই ঠাণ্ডা হাওয়ার। চারপাশে রুক্ষ একটা ভাব। সূর্য ডোবার পরও কমছে না তাপমাত্রা। দিনের বেলা ঘর থেকে বের হলেই মরুর দেশের মতো লু-হাওয়া শরীরে বিঁধছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চৈত্র মাসের শেষদিকে বাংলাদেশে এমন তীব্র গরম অস্বাভাবিক নয়। দেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ঋতু বৈচিত্র্যের জন্য চৈত্র মাসে এ সময় গরম বা দাবদাহ যুগ যুগ ধরে ছিল। তবে বছরে কতদিন ও কত সময় ধরে তাপপ্রবাহ স্থায়ী হচ্ছে তা ভাবনার বিষয়। কারণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর ভূমির তাপমাত্রা এক দশমিক এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে। এখন বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বেড়েছে। এতে আগামী পঞ্চাশ বছরে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রিতে ঠেকতে পারে।

এদিকে রাজধানীসহ একাধিক জেলায় বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। প্রখর রোদেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বের হচ্ছেন মানুষ। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই মাঠেঘাটে কাজ করছেন তারা, চালাচ্ছেন রিকশা, ঠেলাগাড়ি। রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা রিকশাশ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, মাথার ওপরে সূর্য আর রাস্তার গরমে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। রোদ যেন শরীরের চামড়ার ভেতর ঢুকে যায়।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ : তীব্র দাবদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রায় সব বয়সি মানুষ। গরম হাওয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিট স্ট্রোক। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সি মানুষ। এ অবস্থায় তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, তাপদাহে জনস্বাস্থ্যে দ্ইু ধরনের প্রভাব পড়ছে। একটি তাৎক্ষণিক প্রভাব। গরমে যারা বের হয়, ঘেমে শরীর থেকে লবন ও পানি বের হয়ে যায়, পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যারা অনেকক্ষণ গরমে হাঁটে, কায়িক শ্রমের কাজ করে, তাদের মধ্যে হিট স্ট্রোকের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। নাড়ির গতি বেড়ে যায়, ব্লাড প্রেসার কমে যায়। অন্যদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়িা সক্রিয় হয়ে ওঠে। হাম, চিকেন পক্স, ডায়রিয়ো বেড়ে যায়। গরমে হাসফাস করতে গিয়ে মানুষ হাতের কাছে যে পানি ও শরবত পায়, তাই খায়, কিন্তু এসব অধিকাংশ পানি ও শরবত অনিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি। ফলে টাইফয়েডসহ খাদ্যের বিষক্রিয়া দেয়া দেয়। পাশাপাশি গরমে অনেকেই বরফ ব্যবহার করেন। কিন্তু আমাদের বরফ কলগুলোর অধিকাংশই অনিরাপদ পানির ব্যবহার করা হয়। সেই বরফের মধ্যেও পানিবাহিত রোগের বিস্তার লাভ করে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারী নানা অসুখে ভুগেন। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

তিনি বলেন, তীব্র তাপদাহে প্রকৃতি যেমন অসুস্থ হয়ে যায় তেমনি জনজীবনও অসুস্থ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়াই ভালো। যারা বাইরে যাবেন সম্ভব হলে ছাতা ব্যবহার করবেন। যারা রোজাদার নন, তারা পানি ও খাবার নিয়ে বের হবেন। রোজাদাররা কায়িক শ্রম একটু কম করবেন। হিটস্ট্রোক হলে গাছের ছায়ায়, একটু খোলামেলা জায়গায় নিতে হবে। গরমে সিনথেটিক না পরে সুতি ঢিলেঢালা পোশাক পড়া উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App