×

জাতীয়

বুনন ও রং বৈচিত্র্যের মধ্যমণি শাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১২ পিএম

বুনন ও রং বৈচিত্র্যের মধ্যমণি শাড়ি

ছবি: ভোরের কাগজ

রোজার প্রথম দিন থেকেই ঈদের কাউন্ট ডাউন শুরু। ঈদের পোশাক মানেই হাজার রংয়ের মেলা। অগুনতি নতুন ফ্যাশন, স্টাইল ও ডিজাইন। ক্রেতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশি ফ্যাশন ডিজাইনাররা চেষ্টা করেন নতুন কিছু উপহার দিতে। ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইটের বদৌলতে আজকাল ক্রেতার মননে প্রভাব ফেলে চলেছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনও।

প্রতিবারের মতো এবারো ঈদকে ঘিরে ফ্যাশন হাউসগুলোর রয়েছে নানা আয়োজন। এই ঈদে নজরকাড়া ডিজাইন আর প্যাটার্নকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই। বৈচিত্র্যময় নকশা, কাপড়ের বুনন ও রংয়ের পাশাপাশি আবহাওয়াকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আর এসব বৈচিত্র্যের মধ্যমণি হচ্ছে শাড়ি। শুধু ঢাকাই শাড়িতেই নয় বরং জামদানি, বেনারসি, কটন, পিওর তাঁত- সব শাড়িতেই নারীরা হয়ে ওঠে আরোও আকর্ষণীয়। তাই প্রতিবারের মতো এই ঈদেও বাঙালি নারীদের শাড়িপ্রীতির কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে বিভিন্ন রংয়ের ও নকশার শাড়ি।

ঈদ বাজার ঘুরে জানা যায়, বিদেশি শাড়ির তুলনায় বরাবরের মতো এবারও দেশি শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ শাড়ির নকশা অনেকটা মিক্স এন্ড ম্যাচ বলা যায়। ব্লক, এমব্রয়ডারি, কাঁথা, এসিড পেইন্ট- সব ধরনের নকশার মিশেল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রিকসে কটনের পাশাপাশি সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, র-সিল্ক, কাতান, সিল্ক কাতান, টিস্যু, জর্জেটের শাড়ি এসেছে। এছাড়া বাহারি নকশার জামদানিও রয়েছে। বেনারসির কিছু নতুন কালেকশন এসেছে। এছাড়া ভারতীয় শাড়ি কাঞ্জিবরনের বেশ চাহিদা দেখা যাচ্ছে।

এদিকে আবহাওয়াকে মাথায় রেখেই হালকা রংকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় হালের ফ্যাশনে ট্রেন্ড হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে ন্যুড কালার। তবে এসব শাড়িতে রং এবং নকশা মিলেই থাকবে চমৎকার এক ফেস্টিভ লুক। ঈদে রং বাংলাদেশ থিমনির্ভর ফ্যামিলি কালেকশন তৈরি করেছে। উৎসবে আনন্দে পাখির রং স্লোগানে। তারা বলতে চায় রংধনুর প্রতিটি রংই আছে পাখিদের শরীরে। আর এই থিম নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শাড়ির জমিনজুড়ে।

অঞ্জন’স-এর অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার কাওসার আহমেদ জানান, এবারের ঈদে তীব্র গরমের কারণে ক্রেতাদের স্বস্তি ও আরামের কথা মাথায় রেখে সুতি কাপড়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এন্ডি কটন, হাফ সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, ভয়েল, রাজশাহী সিল্ক, জামদানি ও কাতানের বেশ

কিছু নতুন কালেকশন এসেছে। রংয়ের ক্ষেত্রে এবার হালকা রং বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষত ঈদ আর পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে সাদা নীল রংসহ একাধিক রং প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়া ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি এবং এপ্লিকের কারুকাজ এসেছে সুতি শাড়িতে।

বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, হালকা সুতি শাড়ির পাশাপাশি কেউ কেউ আবার ভারি কাজের শাড়িও পছন্দ করছেন। তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী জমকালো ও আকর্ষণীয় শাড়ি কালেকশনও আছে। এছাড়া পিওর সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন নিয়ে বেশ কিছু নকশায় শাড়ির সমাহার জমে উঠেছে। এখানে হালকা রঙের তুলনায় উজ্জ্বল রংকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বেশিরভাগ শাড়িই ব্ল্যাক, ইয়েলো, ব্লু, বেগুনি, কমলা, মেজেন্টার মতো উজ্জ্বল রংয়ের। এ বাহারি রঙের শাড়ির জমিনজুড়ে এমব্রয়ডারি এবং স্প্রিং প্রিন্টের কারুকাজের দ্বারা নান্দনিক রূপ পেয়েছে। এছাড়া শাড়ির ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে লেইসেরও ব্যবহার করা হয়েছে, যা শাড়িতে আভিজাত্য এবং উৎসবমুখী এক আবহ সৃষ্টি করবে। আর যারা শাড়ি পরতে ঝামেলা কিংবা খানিকটা অস্বস্তি বোধ করেন তাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের কথা মাথায় রেখেই নতুন নকশার রেডিমেড শাড়ি এসেছে ঈদ কালেকশনে। সিল্ক, নেট, মসলিন, শিপন ইত্যাদি কাপড়ে পাওয়া যাচ্ছে এই রেডিমেড শাড়িগুলো।

ধানমন্ডি হকার্সে ঘুরেফিরে দেখা গেল সুতি ও জামদানি শাড়ির পাশাপাশি এবার তাঁতের শাড়ির চাহিদাও ব্যাপক। আর তাঁতের শাড়ির মধ্যে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আছে। যেমন জুট কটন, সফট কটন, এন্ডি কটন, টাঙ্গাইল তাঁত ইত্যাদি। এবারের ঈদে নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল সব মোটিফ।

এছাড়া বিশ্বরঙ বরাবরের মতোই দেশীয় কাপড়, উপকরণ ব্যবহার করে পোশাকে ট্রেন্ডি এবং ট্রেডিশনাল লুকের নান্দনিক উপস্থাপন করেছে। দেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক কাপড় যেমন সুতি, ধুপিয়ান সিল্ক, তসর সিল্ক, লিলেন, কাতান, জ্যাকার্ড কাপড় ব্যবহার করেছে, রংয়ের ব্যবহারেও কনট্রাস্ট কালারের পাশাপাশি রংয়ের ‘ম্যাচিউরড টোন’ এর পরিমিত ব্যবহার করেছে। কাজের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, ডিজিটাল প্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কারচুপি, নকশী কাঁথা জারদৌসীসহ মিশ্র মাধ্যমের নিজস্ব বিভিন্ন কৌশল। বাচ্চাদের জন্য এনেছে নান্দনিক সব কালেকশন, সেই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক এবং নারীদের জন্য রয়েছে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া।

বিভিন্ন ফেব্রিকস, বাহারি রং এবং জমকালো নকশার শাড়ি পাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স, আজিজ সুপার মার্কেট, পিংক সিটি, গাউছিয়া, নবরূপা, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন প্লাজাসহ বিভিন্ন শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসে। এছাড়া দেশীয় শাড়ি যেমন তাঁত, কটন, এমব্রয়ডারি, ভরাট কাজের শাড়িগুলো পাবেন কে-ক্রাফট, বিশ্বরঙ, অঞ্জন’স, আড়ং, বসুন্ধরার দেশিদশের মতো ব্র্যান্ডগুলোতে।

জানতে চাইলে ফরচুন শপিংমলের বর্ণিল শাড়ির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. আল আমিন বলেন, দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি এবার ভারতীয় কাঞ্জিবরন শাড়ির বেশ চাহিদা। তবে রমজানের প্রায় শেষের দিকে এসেও যে হারে বিক্রি প্রত্যাশা ছিল, তেমনটি হচ্ছে না।

একই মার্কেটের তাঁতপল্লীর মালিক মো. লিটন বলেন, এবারের ঈদ আর বৈশাখকে সামনে রেখে দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি বিদেশি শাড়িও তুলেছি। কিন্তু বিক্রি তেমন জমছে না। ভেবেছিলাম মহামারির পর ব্যবসা ভালো হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। অথচ বছরের ৯ মাস অনেকটা লস দিয়ে রমজান আর পুজোর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এখন স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। করোনার ধাক্কা, তারও আগে ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালীন যে ধাক্কা ব্যবসায় লেগেছিল তা সামলে উঠতে পারিনি। দিশেহারা লাগছে।

সঞ্চিতা ফ্যাশন হাউজের বিক্রয় প্রতিনিধি জালাল উদ্দিনেরও একই আক্ষেপ। তিনি জানান, দেশি বিদেশি অনেক শাড়ির আইটেম তোলা হয়েছে, কিন্তু ক্রেতার দেখা মিলছে না। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে কথা বলারই সময় পেতাম না। দরদাম

সুতি তাঁতের শাড়ি পাবেন ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে, জামদানি পাবেন ১৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে, মসলিন পাবেন সর্বনি¤œ ৩০০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০-১১ হাজারের মধ্যে। এছাড়া সিল্ক জামদানি পাবেন ১৭০০ টাকায়, ব্লক প্রিন্ট সুতি শাড়ি পাবেন ১১৫০ টাকায়, ইন্ডিয়ান কাতান পাবেন ৩০০০-৪০০০ টাকায়, জর্জেট শাড়ি পাবেন ১০০০ টাকায়। বিশ্বরঙে তাঁতের উপর নকশা করা শাড়িগুলোর দাম শুরু হয়েছে ১৫০০ থেকে ৭-৮ হাজারের মধ্যে, আর পিওর তাঁতের শাড়িগুলোর দাম শুরু হয়েছে ১৫০০ থেকে ১০-১১ হাজারের মধ্যে। অঞ্জন’স-এর শাড়ির দাম শুরু হয়েছে ১৮০০-৪০০০ এর মধ্যে। তবে শাড়ির মান, ফ্রেবিকস এবং নকশার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জায়গায় নানা দামে পাওয়া যাচ্ছে এসব শাড়ি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App