×

সারাদেশ

দৌলতপুরে হিসনার মাটি তোলায় গ্রামবাসীর আপত্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম

দৌলতপুরে হিসনার মাটি তোলায় গ্রামবাসীর আপত্তি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হিসনার খনন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরেও নদীপাড় কাটার কর্মযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। ছবি: ভোরের কাগজ

দৌলতপুরে হিসনার মাটি তোলায় গ্রামবাসীর আপত্তি

আমলে নিচ্ছে না পাউবো

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন ও পাড় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে গত বছর উদ্ধার করা হয় দূষণ, দখল আর অপব্যবহারে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নদী হিসনার দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার এলাকা। ঐতিহ্যের হিসনা এখন পেয়েছে ভরা যৌবনরেখা, অপেক্ষায় পদ্মার পানি আর ভরা মৌসুমের। তবে হিসনাপাড়ের মানুষজন জানাচ্ছেন নতুন বিপত্তির কথা। নদী খনন করা মাটি দিয়ে পাড় বেঁধে রাখার দাবি থাকলেও এই নদী পাড়ের মাটি বিক্রি করছে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। হিসনা থেকে মাটি তোলার ঘটনায় গ্রামবাসী আপত্তি জানিয়ে আসলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নদীর নাব্যতা ফেরানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং পাড় সংরক্ষণে এই চলমান কার্যক্রম দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা হিসনায় অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এর পরিপ্রক্ষিতে সম্প্রতি হিসনাপাড়ের মাটি বিক্রি শুরু হলে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অভিযোগের ঝুলি নিয়ে এলাকাবাসী দৌড়ঝাঁপ করছেন দপ্তরে দপ্তরে। কিন্তু তাতেও থামছে না মাটি কেটে সাবাড় করার কর্মযজ্ঞ।

দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের মাদাপুর গ্রামের কৃষক আনারুল ঠাকুর জানান, নদীর উভয় পাড় ওই মাটি দিয়ে বেঁধে দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। এ বিষয়ে গ্রামবাসী দাবি করে আসছেন নদী খননের শুরু থেকেই। কিন্তু সম্প্রতি এই মাটি টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে।

একই গ্রামের টুকু শেখ বলেন, হিসনা খননে কৃষকদের উপকার হয়েছে। হিসনার পাড় আমরা এলাকাবাসী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এক বছর পর হঠাৎ এসে এই মাটি কাটতে গেলে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং একইসঙ্গে নদীপাড়ের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হিসনাপাড়ের বাসিন্দা রাজু মণ্ডল বলেন, আমরা চাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা থাক। নদীর মাটি নদীর পাড়ে থাক। এসব মাটি হিসনার পাড় বাঁধতেই কাজে লেগে যাবে, বিক্রির কোনো প্রয়োজন নেই। সেখানকার আরেক বাসিন্দা বাবু সরদার বলেন, মাটি কাটার জন্য নদীর তীরবর্তী আমাদের জমির গাছগাছালি ও ফসল প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর পাড় মজবুত রাখতে যেখানকার মাটি সেখানেই রাখা ভালো।

পার্শ্ববর্তী মথুরাপুর ইউনিয়নের হিসনা নদী তীরবর্তী এলাকার পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক ভিডিও ধারণ করা বক্তব্যে বলেন, মাটি তো পাড়ে আছে, সরকারি কোনো লোক এসে আমাদের সাথে আলাপ করেননি। সরকারি কোনো মানুষ এসেও এখানে মাটি বিক্রি করছেন না। আমরা সরেজমিনে দেখছি, এখানে নদী কর্তৃপক্ষের কোনো লোক নেই। তবুও নদী খননের পর পাড় বেঁধে রাখা মাটি ও নদীপাড়ের পুরনো মূলস্তরের মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে।

এদিকে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে হিসনাপাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। জড়িয়েছে পুলিশি ঘটনাও। দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এলাকা এখন শান্ত রয়েছে। প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। এলাকাবাসীর কোনো দাবি থাকলে তারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে তাদের দাবি জানাতে পারেন, সেই সুযোগ তো তাদের আছে। কিন্তু কেউ আইন হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জমান মুকুল বলেন, সরকার যেহেতু মাটি বিক্রির প্রয়োজন মনে করছে সেহেতু আমাদের জায়গা থেকে কিছু করার নেই। তবে জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি জানলে নিশ্চয় সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদলাবে। হিসনার তীরবর্তী আরেক ইউনিয়ন মথুরাপুরের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে। হিসনাপাড়ের মানুষ যা চান আমরা তাই সমর্থন করি। এখানে জনগণ যা চাইবেন তাই বাস্তবায়ন করা হবে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এলাকাবাসীর অনেকে হিসনাপাড়ের মাটি স্থানান্তর চান বলে জানিয়েছেন। এ জন্য খনন করা হিসনার কিছু কিছু জায়গায় মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে মাটি নদীর পাড়েই থাকলে নদী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো সমস্যা নেই। মানুষের বা নদীর ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না। যাদের জন্য নদী খনন করা হয়েছে তাদের যদি অসুবিধা হয় তাহলে আমরা সেটি করবো না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ দিনে নদীপাড়ের মাটি বিক্রি করা হয়েছে অল্প কিছু পরিমাণে, যা খুবই কম মূল্যের। যদিও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। স্থানীয়দের হিসাবে প্রতিদিন হিসনার পাড় থেকে অন্তত ২শ গাড়ি (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বিশেষ ধরনের গাড়ি) মাটি কাটা হচ্ছে। যার গাড়িপ্রতি বাজারদর অন্তত ৫শ টাকা করে।

কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বলেন, হিসনার খনন করা মাটি পাড় বাঁধাইয়ের পর উদ্বৃত্ত থাকলে তা স্থানান্তর বা বিক্রির জন্য এক বছর আগেই খনন পরবর্তী সময়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছিলাম। তারা সে সময় তোয়াক্কা করেনি। এখন নদী পাড়ের পরিবেশ, প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। অসময়ে কাজটি করতে আসলেও এ বিষয়ে আমাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুই জানায়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App