×

জাতীয়

পথশিশুরা দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও সহিংসতার শিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৪ পিএম

বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে বসবাসকারী শিশুরা চরম দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রোগ, নিরক্ষরতা ও সহিংসতাসহ নানা বঞ্চনার শিকার। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক এক জরিপে উঠে এসেছে।

সোমবার (১০ এপ্রিল) ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিবেদনে উঠে আসা পথশিশুদের এই বাস্তব চিত্র দেশের পথশিশুদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মসসূচি গ্রহণে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকা ও দেশের আটটি বিভাগের হটস্পটে (যেসব স্থানে পথশিশুর আনাগোনা বেশি) ৫-১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ শিশুর কাছে সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। জরিপে রাস্তাঘাটে বসবাসকারী শিশুদের মোট সংখ্যা না থাকলেও ইউনিসেফ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো বেদনাদায়ক। এই বিষয়গুলো কেবল আমাদের কাজ করার জায়গাগুলো দেখিয়ে দেয় না, রাস্তায় বসবাস ও কাজ করা শিশুদের জন্য আমাদের সহানুভূতি এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।

যেসব শিশু তাদের পরিবারসহ বা পরিবার ছাড়া বসবাস বা জীবিকা অর্জনের জন্য তাদের বেশিরভাগ সময় রাস্তায় কাটায় তাদের রাস্তাঘাটে বসবাসকারী শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই শিশুদের বেশিরভাগই ছেলে (৮২ শতাংশ) ও তাদের বেশিরভাগ দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে রাস্তায় আসে। প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ৬ শতাংশ শিশু এতিম অথবা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তা তাদের জানা নেই।

জরিপে জানা যায়, এই শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন (৩০ শতাংশের বেশি) জীবনের সবচেয়ে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা, যেমন ঘুমানোর জন্য বিছানা এবং নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য দরজা বন্ধ করে রাখা যায় এমন একটি ঘর থেকে বঞ্চিত। তারা পাবলিক বা খোলা জায়গায় থাকে ও ঘুমায়। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায় শুধু একটি পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরো বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে। প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা ঘুমায় এবং ১৭ শতাংশ শিশু কয়েকজন একসঙ্গে মিলে ঘুমানোর মাধ্যমে সুরক্ষা ও স্বস্তি খোঁজে। শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) রাতে তাদের ঘুমের সময় ঘটে থাকে।

লজ্জাজনক নির্যাতন ও হয়রানি: রাস্তায় বসবাসকারী শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয় পথচারীদের মাধ্যমে। জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে। ১২ বছর বয়সের হাসিব বলে, আমাদের প্রতি লোকজনের বাজে আচরণে আমি অনেক কষ্ট পেতাম, আমরা ঘুমানোর চেষ্টা করলে তারা আমাদের দিকে পানি ছুড়ে মারত। তারা আমাদের অপমানজনক নামে ডাকত। সরকারি সমাজকর্মীদের কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা ও সহায়তা পাওয়ার আগে হাসিব ও তার মা রাস্তায় থাকত।

টিকে থাকার জন্য কাজ করা: জীবিকা নির্বাহের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য সংগ্রহ, ভিক্ষাবৃত্তি বা চায়ের দোকানে, কারখানা ও ওয়ার্কশপে কাজ করতে বাধ্য হওয়া এই শিশুরা প্রতিদিন আঘাত ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু কাজ করার সময় আহত হওয়ার কথা জানায়, আর অর্ধেক শিশু জানায় সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা। কর্মরত শিশুদের প্রায় অর্ধেকই ৯ বছর বয়স থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়। এসব শিশুর বেশিরভাগই সপ্তাহে এক হাজার টাকা বা ১০ ডলারের কম অর্থের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩০-৪০ ঘণ্টা কাজ করছে।

নিরক্ষরতা, অসুস্থতা ও বিচ্ছিন্নতা: রাস্তায় থাকা শিশুদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন (৭১ দশমিক ৮ শতাংশ) পড়তে বা লিখতে পারে না, যা জীবনভর তাদের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে রয়ে যায় এবং তাদের নির্মম ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের অর্ধেকের বেশি জানায়, জরিপের আগে তিন মাসের মধ্যে তারা অসুস্থ হয়েছিল। ওই সময় তারা জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা ও পানিবাহিত রোগে ভোগে।

জরিপ থেকে আরও জানা যায়, রাস্তায় থাকা শিশুদের সেবা প্রদান করে এমন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তারা যে সহায়তা পেতে পারে সে সম্পর্কে বেশিরভাগ শিশুই (৭৯ শতাংশ) অবগত ছিলো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App