×

অপরাধ

বেকারদের ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ, টার্গেট প্রবাসী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম

বেকারদের ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ, টার্গেট প্রবাসী

ছবি: ভোরের কাগজ

বেকারদের ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ, টার্গেট প্রবাসী

কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ প্রশিক্ষকসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

রাজশাহী জেলার বাঘা থানার আরাজী চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শিপন আহম্মেদ ওরফে আরিফ। ২০১৯ সালে পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে গ্রামের বন্ধু মহলের কাছ থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে সে নিজেই প্রশিক্ষক হয়ে বিভিন্ন বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং প্রতারণার একটি অংশ নেয়ার শর্তে তাদেরকে দিয়ে প্রতারণার কাজ করাতে থাকেন।

ডিবি বলছে, আরিফ প্রধানত সৌদিআরব ও কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসীদের টার্গেট করতেন। ইমো আইডি হ্যাকের পর নানা কৌশলে প্রবাসীদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আরিফ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ২ সহযোগীসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃত দুই সহযোগীর নাম- মজিবুল ইসলাম ওরফে নজিবুল ইসলাম ও রাসেল আহম্মেদ। শুক্রবার রাজশাহীর বাঘা থানায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ডিবি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা সর্ব প্রথম তার নিজের মোবাইলে একটি ফেইক মোবাইল নম্বর দিয়ে আইডি খোলে। গুগোল ব্রাউজার (গুগোল প্লে স্টোরে এই এ্যাপ নিষিদ্ধ) থেকে ‘ইমো ফাইন্ড ফ্রেন্ড’ নামক থার্ডপার্টি এ্যাপস ব্যবহার করে এগারো ডিজিটের ফোন নম্বর ব্যবহার করে সার্স দিয়ে ১০-৫০ টি ইমো একাউন্ট সংগ্রহ করা হতো। সেখান থেকে প্রবাসিদের টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করা হতো। টার্গেট নির্ধারণের পর ইমো আইডিটি প্রথমে একটি ইমো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করে পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন উপায়ে কল ও স্টিকার সেন্ড করে বিরক্ত করে কৌশলে তাকে ইমোতে কল দিয়ে বলা হয়, আপনি কি গ্রুপে থাকতে চান?

স্বাভাবিকভাবে গ্রুপে বিরক্তি ফিল করায় ভিকটিম বলে, না আমি থাকতে চাই না, আমাকে গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দেন। প্রতারক হ্যাকার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভিকটিমকে বলেন, গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দিচ্ছি। তবে, আপনার ফোনে একটি ওটিপি কোড গিয়েছে সেটি দেন। কোড নিয়ে প্রতারক তার ফোনে ভিকটিমের একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। সেখান থেকে টার্গেটের বন্ধু-বান্ধব বা নিকট আত্মীয়দের বাছাই করে। অসুস্থতা বা জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের নিকট টাকা চেয়ে ইমোর মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। ভিকটিমের স্বজনরা এ ধরনের ম্যাসেজ বিশ্বাস করে মোটা অংকের টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ ডিবিকে জানিয়েছে, প্রবাসীদের টার্গেট করে টাকা পাওয়া সহজ। কারণ দীর্ঘ দূরত্ব ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকার কারণে যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ কম থাকে। এজন্যই মূলত প্রবাসীদের টার্গেট করতেন তিনি। একবার একজন প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায় হলে, তিনি ফেইক ইমো একাউন্টটি ডিলিট করে দিতেন এবং আর একটি নতুন ফেইক ইমো একাউন্ট খুলতেন। এভাবে ইমো হ্যাকিং করে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ টাকা আদায় হয় বলে সে একাজ অব্যাহত রাখে।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে আরিফ ও তার ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাইবাছাই চলছে। পাশাপাশি কখনো অপরিচিত-স্বল্প পরিচিত কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত ইমো নাম্বার অথবা ওটিপি শেয়ার না করার অনুরোধ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App