×

জাতীয়

ঈদ ঘিরে পোশাকের অস্বাভাবিক দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৩ এএম

ঈদ ঘিরে পোশাকের অস্বাভাবিক দাম

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে পোশাকের পাইকারি মার্কেট ও শপিংমলগুলোতেও যেন নিত্যপণ্যের বাজারের আঁচ লেগেছে। ঈদকে সামনে রেখে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ক্রেতাদের পকেট কাটার অভিযোগ উঠেছে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাত তুলে রমজানের শুরু থেকেই তারা পোশাকের বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন। বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

ঈদ পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত বেচাবিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন আরেক দল ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, রাজধানীর জনপ্রিয় বিপণিবিতানগুলোয় ঈদের কেনাকাটা এরই মধ্যে শুরু হলেও ক্রেতার সংখ্যা তেমন বাড়েনি।

তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর দাবি, করোনাকাল ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে ২০২০ থেকে ২০২২- এই ৩ বছরের ঈদে আশানুরূপ লাভ হয়নি। এর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। তাই এবারের ঈদে গত ৩ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে, না হলে আগামীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অর্থাৎ ব্যবসা বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে হবে।

এদিকে মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে পোশাকের দাম শতকরা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণও।

অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পোশাকের উপকরণ, সরঞ্জাম, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সেজন্য পোশাকের উৎপাদনকারীরাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বেশি দামে পোশাক কিনে আনায় তাই কিছুটা লাভেই ছাড়তে হচ্ছে। তবে পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রেতাদের উৎসাহে ভাটা পড়েছে। সংসারে পোশাকের যে বাজেট ঈদ উপলক্ষে রাখা হয় তা কমিয়ে আনছেন অনেকে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

ঈদের বাকি এখনো ১৫ দিন। তবে এরই মধ্যে মার্কেট ও শপিংমলগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। অনেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন। অফিস কিংবা বাড়ির কাজের কারণে দিনের বেলা না এলেও সন্ধ্যার পরপরই ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

রাজধানীর বসুন্ধরা, মৌচাক, নিউমার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, ইস্টার্ন প্লাজা, চাঁদনী চক এলাকায় সরজমিন দেখা যায়, ক্রেতাদের চাহিদা থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, গাউন, শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে। এই কয়েকটির পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। দোকানগুলোও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সাজিয়ে রেখেছে দেশি-বিদেশি পণ্যগুলো। ক্রেতা দেখলেই হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মজার মজার কথা ও অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা।

তবে ক্রেতার পোশাক পছন্দ হলেই ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন। হাজার টাকার কাপড়ে ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মুনাফা করছেন। অর্থাৎ ক্রেতারা ২০২২ সালে যে পোশাক এক হাজার টাকায় কিনেছেন, এ বছর সেটা ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যারা দরদাম কম করছেন, তাদের কাছ থেকে আরো বেশি নেয়া হচ্ছে।

ভারত-চীন থেকে টি-শার্ট আমদানি করে আজিজ সুপার মার্কেটে বিক্রি করেন বুশরা ফ্যাশনের সাব্বির হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর ব্যবসা মোটামুটি হয়েছে। এ বছর কেনার লোকই আসছে না। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কেনাকাটার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে।

গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি পিস শার্টের মূল্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গত বছর যে চায়না শার্ট বিক্রি করেছি ২৫০ টাকা, এবার সেই শার্ট বিক্রি করছি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকায়।

ইস্টার্ন মল্লিকার ক্লাসিক বুটিক শাড়ির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. রফিক বলেন, ৩০০ টাকা বেতনে ঢুকে গত ৩৭ বছর ধরে একই দোকানে কাজ করছি। এর মধ্যে বেতন বেড়ে ১৬ হাজার টাকা হয়েছে। এই অভাগাদের বেতনের কথা কোনো মিডিয়া বলে না। কিন্তু প্রতি বছরই কাপড়ের দাম দফায় দফায় বাড়তে দেখেছি। এ বছর যেন অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে, যে কারণে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। মানুষ উল্টেপাল্টে দেখে না কিনেই চলে যাচ্ছে। অথচ অন্যান্য বছর রোজার মাঝামাঝি সময়ে কারো সঙ্গে কথা বলার ফুরসতই পেতাম না।

একই মার্কেটের জেসমিন ম্যাচিং সেন্টারের ম্যানেজার মো. ওসমান গনি জানান, আগে রাজধানী ভয়েল বিক্রি হতো প্রতি গজ ৬০ টাকা, এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। যে থ্রিপিস বিক্রি হতো ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়, এখন তা ২৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

এস টি এস লেডিস ফ্যাশনের ম্যানেজার নাদিম সিদ্দিকী বলেন, আমরা টিসু, মসলিনসহ বিদেশি পোশাকই বিক্রি করি। মূলত দাম বাড়ানো হয়নি, দামি কাপড়টাই আনা হয়েছে। তবে বিক্রি গতবারের চেয়ে অনেক খারাপ।

কথা হয় বরিশাল ম্যাচিং সেন্টারের মালিক মো. ইদ্রিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে কাপড় আমরা ১০০ টাকায় কিনেছি, তা বিক্রি করছি ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়। সব জিনিসের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে, স্টাফ খরচ থেকে বিদ্যুৎ, দোকান ভাড়া সব বেড়ে যাওয়ায় আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

চলন্তিকা পাঞ্জাবি সেন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সালমান বলেন, ভারত থেকে আগে মালামাল আসত। এখন এলসি বন্ধ থাকায় রেট বেশি পড়ে গেছে।

দুই শিশু নিয়ে মালিবাগ থেকে এসেছেন শাহিন ফরহাদ। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্য চড়া দামেই বড় দোকান থেকে কাপড় কিনেছি। নিজের জন্য ফুটপাথের দোকান থেকে ৩শ টাকা দামের একটা পাঞ্জাবি ঈদের দিন গায়ে দেব। দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫০০ টাকার শার্ট কিনলাম সাড়ে ৭শ টাকা দিয়ে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, গত তিন বছর করোনা ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে বড়ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। রে ওপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সব কিছুরই দাম বেড়েছে। তাই ঈদের পোশাকের দামও বেড়েছে। এবার ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারলে আশা করছি সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App