×

সারাদেশ

অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় চাঁদাবাজির অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০৪ পিএম

অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় চাঁদাবাজির অভিযোগ

ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় চাঁদাবাজির অভিযোগ

ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় চাঁদাবাজির অভিযোগ

ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় চাঁদাবাজির অভিযোগ

ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে চাওয়াই নদী। ভূমি অফিসের তথ্যমতে চাওয়াই নদী হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা সরকারি টাকা লুটপাট করার জন্য নদী কেটে খাল খনন করছে। এর সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয়রা অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

খননে স্থানীয়দের চরম দূর্ভোগ ও নদী কেটে খান তৈরির অনিয়ম নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক খননের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন মদন উপজেলার সমকাল প্রতিনিধি মোতাহার আলম চৌধুরী ও প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি নূরুল আলম কামালসহ অজ্ঞাত ৩ জনের বিরুদ্ধে মদন থানায় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেছেন।

[caption id="attachment_420845" align="alignnone" width="1600"] ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি[/caption]

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খাল খনন প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেলাল কন্সট্রাকশন চাওয়াই নদীর খনন কাজ বাস্তবায়ন করছেন। চাওয়াই নদীর ৪.০০ কিলোমিটার খনন কাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৮৮ টাকা। ২০২২ সালের ৬ জুন কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। খনন কাজের দরপত্র অনুযায়ী ১৮.০০ থেকে ২৫.১৯ ফুট প্রস্থে অবস্থাভেদে গভীরতা ১০ থেকে ১২ ফুট। এর সাথে খননের জায়গা থেকে ৩৮ থেকে ৪০ ফুট দূরত্বে মাটি ফেলার কথা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড চাওয়াই নদীকে খাল বানালেও মদন ভূমি অফিসের তথ্যমেত নদীই রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ জুন কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরে হয়েছে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে। তড়িগড়ি করে খনন কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করছেন। গত ২ মাসে ৪ কিলোমিটার নদীর মধ্যে খনন হয়েছে ২ কিলোমিটার। নিয়মনুযায়ী খননের জায়গা থেকে ৩৮ থেকে ৪০ ফুট দূরে মাটি রাখার কথা থাকলেও মাটি দূরে না সরিয়ে নদীর পাড়েই রাখা হচ্ছে। বৃষ্টিতে আবার সেই মাটি ধসে নদী ভরাট হচ্ছে। খননের মাটি ঠিকাদার মন মতো রাখায় কৃষকরা চরম দূর্ভোগে পড়েছে। নদীতে পানি চলে আসায় নির্ধারিত সময় ৩০ এপ্রিলের মধ্যে খনন কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

[caption id="attachment_420833" align="alignnone" width="1280"] ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি[/caption]

গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক, রিপন মিয়া, আশরাফুল আলম, মতি মিয়াসহ অনেকেইে বলেন, ‘সারা জীবন শুনেছি চাওয়াই হচ্ছে নদী। এখন নদীটিকে খাল বানানো হয়েছে। যেভাবে খনন করা হচ্ছে এতে আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। খননের মাটি পাড়ে রাখায় বৃষ্টিতে ধসে নদী আবার ভরাট হচ্ছে। অনেক জায়গায় খনন করা হয়নি। ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছে মতো কাজ করে যাচ্ছে।’

তারা আরো বলেন, ‘নদী খননে আমাদের দূর্ভোগের শেষ নেই। এখন আমাদের বোরো ফসল ঘরে তোলার সময়। খননের মাটির জন্য ধান শুকানো বা বাড়িতে নেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। মাটি সরিয়ে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান তারা।’

মদন উপজেলার প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি নূরুল আলম কামাল বলেন,‘ সমকাল, কালের কন্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিরা খাল খননের অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ যাই। অনিয়ম পেয়ে আমরা সংবাদ প্রকাশ করি। নিজের অনিয়ম ঢাকতে ও আমাদের হয়রানি করার জন্য থানায় একটা মিথ্যা, ভিত্তিহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ দেয় ঠিকাদারের লোকজন।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাওদীদুর রহমান জানান, ‘এ ব্যাপারে একটি চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’ [caption id="attachment_420843" align="alignnone" width="1600"] ছবি: মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি[/caption]

খননে অনিয়মেন বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান,‘খননের কাজ চলমান রয়েছে। এ নিয়ে থানায় শুধু অভিযোগ করেছিলাম। এখন বুঝতেছি মামলা রুজু করতে হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহনূর আলম জানান, ‘কাগজপত্র অনুযায়ী চাওয়াই হচ্ছে নদী। কিন্তু সেখানে খাল খনন প্রকল্প কিভাবে হয়েছে সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলতে পারবে।’

খনন প্রকল্পের তত্বাবাধনকারী নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী ওবায়দুল হক বলেন, ‘খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখার কোন নিয়ম নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার বলা হচ্ছে মাটি নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান মুঠোফোনে জানান, ‘আমার পূর্বে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা বলতে পারবে নদীতে কিভাবে খাল খনন প্রকল্প হয়েছে। এখন খনন কাজ চলমান রয়েছে। পাড়ের মাটি সরিয়ে বিক্রি করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ছয় সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App